Skip to content

সহযাত্রা: জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার যৌথ প্রচেষ্টা

Published:

‘সহযাত্রা: কো-ক্রিয়েটিং ইমপ্যাক্ট’ ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও আমাদের পার্টনারদের একসাথে জলবায়ু, পরিবেশ, প্লাস্টিক ও জীবনমান উন্নয়নের কার্যক্রমগুলোর গল্প তুলে ধরে - যেখানে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ চরাঞ্চলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের প্রভাবও তুলে ধরা হয়েছে।

চরাঞ্চলের একজন মা ও শিশু লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন

ইউনিলিভার বাংলাদেশে, আমরা বিশ্বাস করি, দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব তখনই, যখন আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে যাই। এই বিশ্বাস থেকেই আমরা আয়োজন করি “সহযাত্রা: কো-ক্রিয়েটিং ইমপ্যাক্ট” - একটি বিশেষ ইভেন্ট, যেখানে আমাদের পার্টনার, ইন্ডাস্ট্রি সহযোগী, শিক্ষক-গবেষক আর অপিনিয়ন লিডাররা একত্রিত হন। এই ইভেন্টের মূল লক্ষ্য ছিলো, গ্রোথ অ্যাকশন প্ল্যান (গ্যাপ) ২০৩০- এর চারটি সাস্টেইনেবিলিটি পিলারকে কেন্দ্র করে আমাদের এই সহযাত্রা কীভাবে আগামীর টেকসই বাংলাদেশ নির্মাণে অবদান রাখছে, তা সবার সামনে তুলে ধরা।

জলবায়ু, পরিবেশ, প্লাস্টিক ও জীবনমান উন্নয়ন, প্রতিটি পিলারে আমাদের পার্টনারদের গল্প প্রমাণ করে, কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একা বর্তমান পৃথিবীর চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা সম্ভব না। আমাদের দায়িত্ব একসাথে সমাধান বের করা - যাতে এক্সপার্ট, ইনোভেটর ও সমাজের সবার সাথে মিলে কাজ করে স্কেলেবল ইমপ্যাক্ট মডেলের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ: পার্টনারশিপের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। নদীর পানি বেড়ে যাওয়া, প্রতিনিয়ত বন্যা আর প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ বিপদে পড়ে। বিশেষ করে দূরবর্তী নদীচর বা দ্বীপে যারা থাকেন, তাদের জন্য এই বিপদ শুধু এককালীন না, বরং তাদের প্রতিদিনের জীবন। এই এলাকার মানুষের জন্য ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া খুব কঠিন। দূরত্ব, বিচ্ছিন্নতা আর দারিদ্র্যের কারণে হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই সমস্যাগুলো আরও বাড়ছে। সাময়িক স্বাস্থ্য সংকট এখন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে - যেখানে জলবায়ুর প্রভাব বেশি - অন্যদের সাথে মিলে কাজ করলেই প্রকৃত পরিবর্তন আনা সম্ভব সেই জায়গার মানুষদের জন্য।

ফ্লোটিং হোপের গল্প: লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল

'সহযাত্রা' আয়োজনে যে দারুণ গল্পগুলো সামনে এসেছে, তার মধ্যে একটি হলো লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের (এলএফেএইচ) গল্প। এই হাসপাতালটি তৈরির পেছনে ছিলেন রুনা খান, যিনি ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা।

২০০২ সালে ফ্রেন্ডশিপ একটি সাধারণ নদীপথের জাহাজকে বাংলাদেশের প্রথম ভাসমান হাসপাতালে রূপান্তরিত করে। এটি ছিল একটি সাহসী উদ্যোগ, যা এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা চর এলাকার হাজার হাজার মানুষের জন্য স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

এই হাসপাতাল বছরের পর বছর ধরে দেশের সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছে এবং তিন ধাপের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে। সাধারণ চিকিৎসা থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপারেশন পর্যন্ত - এই হাসপাতাল এমন মানুষের কাছে পৌঁছেছে, যারা দূরে থাকার কারণে বা চিকিৎসা সহজলভ্য না হওয়ায় অন্য কোথাও চিকিৎসা পেতেন না।

কাজের ফলাফল

লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের ইমপ্যাক্ট নিজেই তার গল্প বলে:

  • হাসপাতালটি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার মানুষ বিনা খরচে অথবা খুব কম খরচে চিকিৎসা পেয়েছেন।
  • তারা ১৩ লাখেরও বেশি চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি বড় অপারেশনও আছে। যেমন: পোড়া, ঠোঁট কাটা (ক্লেফট লিপ), চোখের ছানি, হাড়ের সমস্যা, প্রোল্যাপস এবং ফিস্টুলার মতো কঠিন রোগ সারানো হয়েছে।
  • প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫টি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ক্যাম্প করা হয়েছে, যেখানে বিদেশ থেকে অনেক ডাক্তার এসে চিকিৎসা দিয়েছেন।
  • লাইফবয় ব্র্যান্ডের নাম আর সহায়তার কারণে এই হাসপাতালটি দেশের সবচেয়ে দুর্গম এলাকাতেও মানুষের বিশ্বাস আর পরিচিতি অর্জন করতে পেরেছে।

চরের মানুষদের কাছে এই হাসপাতাল শুধু একটি হাসপাতাল নয়, এটি তাদের জন্য সত্যিকারের “ভাসমান আশা”।

সহযাত্রার মূল ভাবনা: সবাই মিলে কাজ করা

লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল 'সহযাত্রা'র প্রকৃত অর্থকে তুলে ধরে - সহ-সৃষ্টি বা কো-ক্রিয়েশন। এখানে ফ্রেন্ডশিপ এনজিও তাদের কাজের অভিজ্ঞতা, কমিউনিটিতে গভীর আস্থা, আর অবিরাম ইনোভেশন নিয়ে এসেছে। আর ইউনিলিভার বাংলাদেশ এনেছে ব্র্যান্ড পারপাস, রিসোর্স এবং পার্টনারশিপ।

একসাথে আমরা এমন একটি মডেল তৈরি করেছি, যা বাংলাদেশের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটিগুলোর জন্য প্রয়োজনীয়। এই কো-ক্রিয়েটেড মডেলের মাধ্যমে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল দেখিয়েছে প্রাইভেট ও সোশ্যাল সেক্টরের যৌথ উদ্যোগ কিভাবে এমন অনেক শূন্যতা পূরণ করতে পারে, যা এককভাবে সরকার বা এনজিওদের পক্ষে সম্ভব না। এটি প্রমাণ করে, যখন আমরা একটি যৌথ লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে একসাথে কাজ করি, তখন দক্ষতা, প্রসার আর সহমর্মিতা, অর্জন করা যায়।

আগামী দিনের পথচলা: একসাথে এগিয়ে

সাস্টেইনেবেল ইমপ্যাক্ট কোনো একক প্রচেষ্টা না—এটি একসাথে এগিয়ে চলার এক যাত্রা, যেখানে আছে বিনয়, পারস্পরিক সংলাপ আর ধারাবাহিক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি।

ইউনিলিভার বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটিগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার দায়িত্ব। সেই বিশ্বাস থেকেই ফ্রেন্ডশিপের সাথে মিলে আমরা গড়ে তুলেছি লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল—যা জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে এবং আমাদের পারপাস ‘সবার প্রতিদিনের জীবন আলোকিত ও উজ্জ্বল করা’-এর পথে আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে।

Back to top