প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে প্রায় ৩০টি শিশু মৃত্যুবরণ করে, যার প্রধান কারণ হচ্ছে পরিছন্নতা বা স্যানিটেশন সুবিধার অভাব। ১৮৯৪ সাল থেকে, লাইফবয় এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের মিশনে কাজ করে যাচ্ছে, এবং হাত ধোয়ার মতো সহজ একটি অভ্যাসের মাধ্যমে কীভাবে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা যায়, তা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে লাইফবয় তার লক্ষ্য পূরণে অবিচল রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে এবং আজও মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করার মিশনে বদ্ধপরিকর রয়েছে। । লাইফবয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডে, যেখানে এটি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। বছরের পর বছর হাত ধোয়াকে সুরক্ষিত আর স্বাস্থ্যকর জীবনের চাবি হিসেবে প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশে লাইফবয় স্বাস্থ্যকর সমাজ গড়ার লড়াইয়ে এক বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশে লাইফবয়
১৯৬০-এর দশকে বাংলাদেশে প্রবেশের পর লাইফবয় দ্রুত একটি শীর্ষ হাইজিন সাবান ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের শিশু মৃত্যুর উচ্চহার দেখে, ব্র্যান্ডটি সাবান দিয়ে হাত ধোয়াকে প্রচার করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করে। লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, যা 'ফ্লোটিং হোপ' নামে পরিচিত, দুর্গম এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। এর পাশাপাশি, এই ব্র্যান্ডটি মানুষের মাঝে, বিশেষত শিশুদের মধ্যে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে, যার লক্ষ্য হল স্বাস্থ্যের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সৃষ্টি করা।
হাত ধোয়া: পরিবর্তনের মূল স্তম্ভ
১৯৯০-এর দশকে, বাংলাদেশ মূলত ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগ কারণে শিশু মৃত্যু উচ্চহারের সমস্যায় জর্জরিত ছিল, যেখানে এই রোগগুলো যথাযথ স্যানিটেশন এর অভাবে ছড়িয়ে পড়ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একটি গবেষণায় জানিয়েছে যে, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ডায়রিয়ার প্রকোপ ৪৭% পর্যন্ত কমাতে পারে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার সুফলকে বুঝতে পেরে লাইফবয় বাংলাদেশে হাত ধোয়া নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি শুরু করে।
২০০০ সালে হাত ধোয়ার মতো মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া এই উদ্যোগটি এখন একটি ব্যাপক আচরণ পরিবর্তন কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে, যা বাংলাদেশে লাইফবয়ের প্রয়াসের অন্যতম একটি অংশ। এই যাত্রা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক দেখেছে, যেমন ২০১১ সালে "লাইফবয় স্কুল অফ ৫" কর্মসূচির সূচনা এবং ২০১৫ সালে ছাত্রদের দ্বারা তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন। ২০২০ সালে "এইচ ফর হ্যান্ড ওয়াশিং" ক্যাম্পেইন শুরু হয়, যেখানে তরুণ প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২২ সালে, লাইফবয় ২১ দিনব্যাপী আচরণ পরিবর্তন কর্মসূচি চালু করে।
হাত ধোয়ার বাইরে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি
লাইফবয় হাত ধোয়ার বাইরে আরও অনেক ভূমিকা পালন করেছে। ব্র্যান্ডটি জনস্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 'লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশ এভরি ডে' ক্যাম্পেইনটি প্রায় ২৫০,০০০ স্কুল শিক্ষার্থীকে, বিশেষ করে শহরতলীর স্কুল এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন সৃষ্টি করেছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা চাহিদা বুঝতে পেরে, লাইফবয় একটি প্রধান টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে ফ্রি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা পরামর্শ প্রদান শুরু করে। ২০২২ সাল থেকে ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই ফ্রি হেল্পলাইন ব্যবহার করে ডাক্তার পরামর্শ নিয়েছে। এসডিজি ৬-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, লাইফবয় নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, সবার জন্য পরিচ্ছন্ন পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যবিধি চর্চা প্রচলন এবং সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে লাইফবয় সকলের জন্য একটি সুস্থ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

আচরণ পরিবর্তনের উদ্ভাবনী উপায়
লাইফবয় সবসময়ই ইতিবাচক আচরণ পরিবর্তনের জন্য উদ্ভাবনী উপায় খোঁজে। স্বাস্থ্য শিক্ষাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্র্যান্ডটি অভিভাবক এবং তাদের সন্তানদের সঙ্গে এ বছর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উপলক্ষ্যে একসাথে কাজ করেছে। এই কার্যক্রমটি বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের একটি অংশ ছিল, যেখানে ইউনিলিভার বাংলাদেশে কর্মরত একাধিক কর্মী তাদের সন্তানদের সঙ্গে যোগ দেয়, যেখানে দেখা যায় কীভাবে মজার ছলে হাত ধোয়া শেখা যায়। এই ক্যাম্পেইনটি প্রমাণ করেছে যে হাত ধোয়া একটি মজার এবং শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা হতে পারে, যা ইন্টারঅ্যাকটিভ গেমস এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে শেখানো যায়।
এ বছর লাইফবয় প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে শিশুদের কাছে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা করেছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) হ্যান্ডওয়াশিং টিচার হিপ্পো ক্যাম্পেইনটি এই আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি উদাহরণ। এই এআই টুলটি শেখার অভিজ্ঞতাকে পারসোনালাইজড করতে পারে, যা প্রতিটি শিশুর শেখার গতি এবং শৈলী অনুযায়ী পরামর্শ দেয়। এই এআই শিশুদের শেখার ধরণ এবং গতির সঙ্গে মিলিয়ে সে শিশুর জন্য বিশেষ শেখার অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে। তাই, এআই শিক্ষক প্রতিটি শিশুকে প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে, যা হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং শেখানোকে আরও সহজ এবং আনন্দদায়ক করে তোলে। লাইফবয়ের এই ক্রমাগত বিকাশমান পদ্ধতির কারণে আরও অনেক বেশি শিশুদের কাছে পৌঁছাতে এবং জনস্বাস্থ্যে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারবে।
সুস্থ আগামী গড়ে তোলা
লাইফবয়ের যাত্রা একটি ধারাবাহিক বিকাশের গল্প। ব্র্যান্ডটি হাত ধোয়া নিয়ে প্রচারণা ও সবার জন্য একটি সুস্থ ভবিষ্যত গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। শিশুদের ক্ষমতায়ন, অংশীদারিত্ব গঠন এবং উদ্ভাবনী সমাধান প্রচারের মাধ্যমে, লাইফবয় নিশ্চিত করছে যে, প্রতিটি শিশু একটি সুস্থ এবং সমৃদ্ধ জীবনযাপন, ও তার পাশাপাশি অন্যদেরকেও সেই একই অভ্যাস গড়ে তুলতে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।