Skip to content

পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টেকসই উৎপাদন

Published:

ইউনিলিভার পৃথিবী সুরক্ষার যাত্রার একটি অংশ হিসেবে দায়িত্বের সাথে পানি সম্পদ ব্যবহার নিয়ে কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আমাদের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপের যাত্রা ১৯৯৮ সালে শুরু হয়েছিল যখন আমরা কালুরঘাট ফ্যাক্টরিতে (কেজিএফ) বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বর্জ্যপানি শোধনাগার স্থাপন করি। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং টেকসই কার্যক্রমে আরও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের পানির ব্যবহার কমানো ছাড়াও টেকসই পরিবেশ তৈরিতে আমরা অবদান রাখতে চাই।

উপর থেকে তোলা কালুরঘাট ফ্যাক্টরিতে অবস্থিত জলাশয়ের দৃশ্য

পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর মধ্যে পানি অন্যতম। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং শিল্পায়নের সাথে সাথে সুপেয় পানির চাহিদা এখন অনেক বেশি, যা আগে কখনোই এত বেশি ছিল না। তবুও, বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির সরবরাহ সীমিত। জলবায়ু পরিবর্তন এই লড়াইকে আরও জটিল করে তুলছে, যা প্রাকৃতিক পানির উৎসের উপর আরো চাপ সৃষ্টি করছে। ইউনিলিভার থেকে আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের ভবিষ্যত রক্ষা করতে এই মূল্যবান সম্পদটি রক্ষা করা অপরিহার্য। এই কারণেই আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ — পানি কম ব্যবহার করা, যেখানে সম্ভব পানি পুনঃব্যবহার করা, এবং আমাদের কর্মকান্ড দ্বারা পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলানো থেকে বিরত থাকা৷ আমরা আমাদের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ কর্মসূচির মাধ্যমে পানি সম্পদের ঝুঁকি ও ব্যবহার কমানো নিয়ে কাজ করছি, এবং আমাদের সকল অপারেশনে পানির টেকসই ব্যবহারকে প্রচার করছি।

ইউনিলিভারের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি

ইউনিলিভার পৃথিবী সুরক্ষার যাত্রার একটি অংশ হিসেবে দায়িত্বের সাথে পানি সম্পদ ব্যবহার নিয়ে কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, পানি একটি সুস্থ সমাজ, পরিবেশ এবং অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। বর্তমানে, বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ২ বিলিয়ন মানুষ তীব্র পানি সঙ্কটের সম্মুখীন - যার মানে পানির প্রাপ্যতা ও চাহিদার মধ্যে বড় ঘাটতি রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে, আমরা পানি সঙ্কটপূর্ণ এলাকাগুলোতে ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু করতে চাই, যা স্থানীয় ইকোসিস্টেম ও সমাজের উপকারে আসবে, পাশাপাশি আমাদের কার্যক্রমেও উন্নতি ঘটবে। আমাদের বৈশ্বিক কৌশল সব সময় বিশ্বাস করে যে কম সম্পদের মাধ্যমে কার্যকর ফল তৈরি করা সম্ভব। তাই আমরা প্রতিনিয়ত উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নতির মাধ্যমে পানি ব্যবহার, বর্জ্য ও দূষণ কমানোর লক্ষে কাজ করছি।

কালুরঘাট ফ্যাক্টরিতে অবস্থিত বর্জ্যপানি শোধনাগার

ইউনিলিভার বাংলাদেশের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ

বাংলাদেশে পানি প্রতিদিনের জীবন ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও বন্যা ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত, সকল ক্ষেত্রে পানির গুরুত্ব অসীম। তবে, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি। ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করাকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখে।

আমাদের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপের যাত্রা ১৯৯৮ সালে শুরু হয়েছিল যখন আমরা কালুরঘাট ফ্যাক্টরিতে (কেজিএফ) বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বর্জ্যপানি শোধনাগার স্থাপন করি। তারপর থেকে আমরা পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করি রিভার্স অসমোসিস (আরও) এবং বায়ো-এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (বায়ো-ইটিপি) তৈরির মাধ্যমে, যা আমাদের কার্যক্রমে বর্জ্যপানি পুনঃব্যবহার করতে এবং পানির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করেছে।

উৎপাদন কাজে পানি ব্যবহার কমানো

সাবান, শ্যাম্পু এবং টুথপেস্টের মতো নিত্যব্যাবহার্য পণ্য উৎপাদনে পানি অপরিহার্য। ইউবিএলে আমরা উৎপাদনে পানির ব্যবহার কমাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে, আমরা প্রতি টন উৎপাদনের জন্য প্রায় ৫,৪০০ লিটার পানি ব্যবহার করতাম। ২০২২ সালের মধ্যে, আমরা প্রতি টনে ৩,৮০০ লিটার পানির ব্যবহার কমিয়ে এনেছি, যার মাধ্যমে ২০০৮ সাল থেকে ২.২ বিলিয়ন লিটার পানি সঞ্চয় হয়েছে। এই সঞ্চয়টি কালুরঘাট (চট্টগ্রাম) এলাকার ৬২,০০০ পরিবারের দশ বছরের খাবার পানির চাহিদা পূরণের সমতুল্য।

আমাদের এই প্রচেষ্টাগুলোকে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার প্রাথমিক পদক্ষেপ বলা যায়। ২০২২ সালের পর থেকে, আমরা আরও উন্নত ও পানি সাশ্রয়ী উদ্যোগে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি, যার মধ্যে আমাদের সাতটি উৎপাদন অঞ্চলে পানি প্রবাহ মিটার স্থাপন অন্তর্ভুক্ত। এই মিটারগুলো রিয়েল-টাইম ডাটা সরবরাহ করে, যার ফলে আমরা দ্রুত পানি অপচয় সনাক্ত এবং সমাধান করতে পারি।

বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং বর্জ্যপানি পুনঃব্যবহার

আমাদের পানি সংরক্ষণ প্রচেষ্টা আরও বাড়ানোর জন্য, আমরা আমাদের বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ক্ষমতা ২০% বৃদ্ধি করেছি, যার ফলে ৮,০০০ বর্গমিটার সংগ্রহ এলাকা এবং ১০ টন পানির স্টোরেজ ট্যাঙ্ক যোগ হয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে, আমরা বর্তমানে আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রতি বছর ৩০,০০০ লিটার বৃষ্টির পানি ব্যবহার করি, যা আমাদের মোট ব্যবহারের ১২%।

আমরা গর্বিত যে, বাংলাদেশে রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্জ্যপানি পুনঃব্যবহারে আমরা অন্যতম পথপ্রদর্শক। আমাদের ইটিপি এবং রিভার্স অসমোসিস সিস্টেমের মাধ্যমে, আমরা সফলভাবে আমাদের পরিশোধিত বর্জ্যপানির ৪০% বয়লার স্টিম ফিডের জন্য পুনঃব্যবহার করেছি। এই উদ্যোগটির কারণে আমরা ১.০৫৬ বিলিয়ন লিটার পানি পুনঃব্যবহার করতে পেরেছি।

কালুরঘাট ফ্যাক্টরিতে অবস্থিত বর্জ্যপানির জন্য কার্বন ফিল্টার ট্রিটমেন্ট

পানি ব্যবস্থাপনায় ধারাবাহিক উদ্ভাবন

ইউবিএলে, আমরা সবসময় আমাদের পানি ব্যবস্থাপনা উন্নত করার উপায় খুঁজছি। ২০২৩ সালে, আমরা আমাদের গ্লিসারিন প্ল্যান্টের ভ্যাকুয়াম পাম্প আপগ্রেড করেছি, যা প্রতিদিন ১৫ টন পানি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আমাদের কন্ডেনসেট পুনরুদ্ধার ক্ষমতা ২০০% বাড়িয়েছি যার ফলে কুলিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় ৭৫% পানি আমরা পুনরায় ব্যবহার করতে পারি। আমাদের রিভার্স অসমোসিসের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে এবং পানি পুনঃব্যবহার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে, আমরা নিশ্চিত করেছি যে আমাদের উৎপাদনে আরও পানি পুনঃব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়াও, আমরা পার্সোনাল প্রোডাক্ট (পিপি) হোমোজেনাইজার সিল কুলিং সিস্টেমে ব্যবহৃত পানি পুনঃব্যবহার করতে শুরু করেছি, যার ফলে আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বার্ষিক ৩,০০০ টন কমে গেছে। এই উন্নতিগুলোর মাধ্যমে, আমরা ২০২৩ সালে প্রতি টন উৎপাদনে পানির ব্যবহার ১১% কমাতে সক্ষম হয়েছি, এবং ২০১০ সাল থেকে আমাদের মোট পানি সঞ্চয় ২.৮ বিলিয়ন লিটারে পৌঁছেছে।

ভবিষ্যতের প্রতি প্রতিশ্রুতি

আমাদের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপের যাত্রা এখনও শেষ হয়নি। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং টেকসই কার্যক্রমে আরও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের পানির ব্যবহার কমানো ছাড়াও টেকসই পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখতে চাই। প্রতি লিটার পানি বাঁচিয়ে, আমরা শুধু আমাদের কার্যক্রমের দক্ষতা বাড়াচ্ছি না, বরং সেই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের উপর নির্ভরশীল সমাজ এবং পরিবেশের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করছি।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপের প্রতি যে প্রতিশ্রুতি তা আমাদের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির অংশ, যেখানে বর্তমানের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে এগিয়ে যাওয়ায় যেন কোন বাধা সৃষ্টি না হয় - তা নিশ্চিত করা।

Back to top