২০২১ সালেও বিশ্বের অন্যতম বড় শহর ঢাকায় প্রতি ৭৫,০০০ পথচারীদের জন্য মাত্র একটি পাবলিক টয়লেট ছিল। শুধু তাই নায়, এই টয়লেটগুলোও ছিল অপরিচ্ছন্ন। এই পরিস্থিতি পুরুষদের মধ্যে প্রকাশ্যে রাস্তায় মূত্র ত্যাগের প্রবণতা বাড়িয়েছে এবং কর্মজীবী নারীদের পর্যাপ্ত পানি পান করা থেকে বিরত রেখেছে। ভূমিজ নামের একটি সামাজিক স্টার্টআপ এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, এবং তাদের পাশে আছে ডোমেক্সে।
যে প্রয়োজন সবার
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই পাবলিক টয়লেটকে নোংরা মনে করে। এসব টয়লেটে প্রায়ই দুর্গন্ধ থাকে ও সঠিক সুযোগ-সুবিধার অভাব দেখা যায়। যদিও বাংলাদেশে প্রকাশ্যে মলত্যাগ কমেছে, কিন্তু এখনও জনসাধারণের প্রকাশ্যে মূত্র ত্যাগের সমস্যা রয়েছে কারণ তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে ও সুবিধাজনক ব্যবহারযোগ্য পাবলিক টয়লেট নেই। এই পরিস্থিতি শহরের সার্বিক স্যানিটেশনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে, কারণ তারা টয়লেট ব্যবহার এড়াতে কম পানি পান করছেন।
শহরে স্যানিটেশনের অভাব সবাইকে প্রভাবিত করে। দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যার চাপ, এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে নিরাপদ পানি সংকট ও অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে । অনেক বস্তিতেই যথাযথ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। এই সমস্যা জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, পরিবেশ দূষণ ও নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটাতে ভূমিকা রাখে।

অদম্য এক জুড়ি
চ্যালেঞ্জ এখনও অনেক থাকলেও, একাধিক প্রতিষ্ঠান শহরে টয়লেটের সুযোগ-সুবিধা উন্নত ও বৃদ্ধি করবার জন্য কাজ করছে। এর মধ্যে ভূমিজ উল্লেখযোগ্য। ভুমিজ একটি সামাজিক স্টার্টআপ, যারা সারা বাংলাদেশে প্রায় ৫০টি পরিষ্কার এবং সু-পরিকল্পিত পাবলিক টয়লেট পরিচালনা করছে। পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর টয়লেটের প্রচারে অগ্রগামী ডোমেক্স, ২০১৮ সাল থেকে ভূমিজকে সমর্থন করে আসছে।
সময়ের সাথে সাথে এই অংশীদারিত্ব প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে এবং সারাদেশে স্মার্ট পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করছে। ডোমেক্স এবং ভূমিজ, ব্র্যাক ও ওয়াটারএইড এর মতো সহমনা অন্যান্য সংস্থাকেও এই যাত্রার একটি অংশ করেছে, যার ফলে বিশেষজ্ঞদের একত্রিত হয়ে স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনার সু্যোগ তৈরি হয়েছে।
আশার আলো
শুধু পাবলিক টয়লেটের মান বাড়ালেই হবে না, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি চর্চায়ও জোর দিতে হবে। এই লক্ষ্যে, ভূমিজ এবং ডোমেক্স বিশ্ব টয়লেট দিবস ২০২৪ দিবসে একটি সৃজনশীল ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যা সামাজিক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মানুষের মাঝে উন্নত স্যানিটেশন অভ্যাস গঠন করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
ক্যাম্পেইনটি সোশ্যাল মিডিয়া জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের (ইনফ্লুয়েন্সার) মাধ্যমে শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, ইনফ্লুয়েন্সাররা বাংলাদেশের সব পাবলিক টয়লেটকে বাতিল ও ইউসলেস বলে নেতিবাচক মন্তব্য করে একটি অনলাইন আলোচনা শুরু করে। তাদের কনটেন্ট স্যানিটেশন সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক প্রচার পায় ও আলোচনার জন্ম দেয়। পরবর্তীতে এই কনটেন্ট ক্রিয়েটররা প্রকাশ করে যে এটি পাবলিক টয়লেটের বাজে পরিবেশ তুলে ধরার জন্য একটি অভিনব প্রচারণা। একই সাথে সমাধান হিসাবে তারা ভূমিজ দ্বারা পরিচালিত পরিষ্কার টয়লেটগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
দৃষ্টিনন্দন ভিজুয়াল ও আকর্ষণীয় গল্পের মাধ্যমে পরিষ্কার টয়লেটের অভাব ও ভূমিজ টয়লেটকে সেই সমস্যার বিপরীতে আশার আলো হিসেবে এই ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়। এই সৃজনশীল উদ্যোগটি দর্শকদের মনে গেঁথে গুঞ্জন সৃষ্টি করে এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। ক্যাম্পেইনের মূল বার্তা ছিল: "বন্ধ করুন পাবলিকের টয়লেট, ব্যবহার করুন পাবলিক টয়লেট।"
ক্যাম্পেইনটি কয়েকটি কারণে সফল হয়েছিল। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে ৩০ মিলিয়ন ইমপ্রেশন পেয়েছে। একই সাথে ইনফ্লুয়েন্সাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে, যা ক্যাম্পেইনের অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সৃজনশীল ভিজুয়াল এবং আকর্ষণীয় গল্পের কারণে ক্যাম্পেইনটি সকলের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে, যার ফলে ক্যাম্পেইনটির এনগেইজমেন্টের হার বেড়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভূমিজ এর সাথে অংশীদারিত্ব পাবলিক টয়লেটের ব্যাপারে একটি বাস্তব সমাধান প্রদানে শুধুমাত্র সচেতনতাই বৃদ্ধি করেনি বরং জনগণকে পরিষ্কার পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে।
হাইজেনিক টয়লেটেই সুস্থ জীবন
ডোমেক্স জীবাণুনাশক পণ্যের বৈচিত্র্যময় পোর্টফলিওর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সকল পরিবারের মাঝে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন উন্নয়নে নিবেদিত একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ডোমেক্সের মাধ্যমে ইউনিলিভার বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য টয়লেট ও স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। পরিষ্কার পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ডোমেক্স ভূমিজ এর সঙ্গে একত্রে বাংলাদেশে নতুন যাত্রার সূচনা করেছে। এই ক্যাম্পেইনের সাফল্য শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নয়, বরং জনসাধারণের মাঝে আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমেও স্পষ্ট ছিল।
ভূমিজ এর মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনী সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমে, ডোমেক্স একটি পরিষ্কার ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই অংশীদারিত্ব প্রমাণ করেছে যে, সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে কীভাবে বাধা পেরিয়ে একটি সুস্থ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।