Skip to content

টেকসইউন্নয়নকে কীভাবে সফল ব্যবসার কৌশল করা যায়

Published:

"আমি মনে করি, পরিবর্তিত বাস্তবতায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশ সংরক্ষণনিয়ে শুধু দিবস-কেন্দ্রিকবা প্রতীকী উদ্যোগ নেওয়া থেকে বের হয়েএসে আরও বেশি কিছুকরা প্রয়োজন। প্রয়োজন টেকসই উন্নয়নকে বিকাশের আগামী দিনের নতুন ক্ষেত্র হিসেবেবিবেচনা করা।" - জাভেদ আখতার, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড।

ইউনিলিভারবিশ্বের প্রায় ১৯০টি দেশের প্রায় ৩৫০ কোটি মানুষেরজন্য ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করে। আমাদের ব্যবসারসাফল্য নির্ভর করে তাদের সুস্থ, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনেরউপর।

কিন্তুজলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশগত সংকটসেই জীবনকে প্রভাবিত করলে ব্যবসাও ঝুঁকিরমুখে পড়বে। তাই মানুষের জীবনও সমাজের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই উন্নয়নকেমাথায় রেখে ইউনিলিভার ২০১০সালে সাসটেইনেবল লিভিং প্ল্যান (ইউএসএলপি) লঞ্চ করে। এপরিকল্পনা কিন্তু কেবল সামাজিক দায়বদ্ধতাথেকে ছিল না, বরংএই কৌশলের লক্ষ্য ছিল, পরিবেশগত প্রভাবকমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও জীবিকার উন্নয়নেকার্যকর ভূমিকা রাখার।

আমারমনে আছে, এই উদ্যোগনিয়ে সে সময় প্রতিষ্ঠানেরভেতর ও বাইরে অনেকআলোচনা হয়েছে। সে সময়ের বিবেচনায়এই ব্যবসায়িক কৌশল যুগান্তকারী একটিধারণা ছিল। কারণ, তখনপরিবেশ সংরক্ষণ বা বিভিন্ন সামাজিকউদ্যোগকে মূলত ঐচ্ছিক সামাজিকদায়বদ্ধতা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তুইউএসএলপি সে ধারণা ভেঙেদিয়ে টেকসই উন্নয়নকে ব্যবসার মূল ধারায় নিয়েএসেছিল।

প্রায়১০ বছর ধরে এইকৌশল কাজ করার পরযখন টেকসই উন্নয়ন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাজকরা আমাদের সবার জন্য স্বতঃস্ফূর্তহয়ে গেল, তখন ইউনিলিভারইউএসএলপির পরবর্তী ধাপ ‘ইউনিলিভার কম্পাস’ ঘোষণাকরে। এই পরিবর্তনের ভিত্তিছিল ইউএসএলপি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা আর সচেতনতা। কম্পাসকেআমাদের মূল ব্যবসায়িক নীতিতেঅন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ইউনিলিভারপ্রতিষ্ঠানের সব ক্ষেত্রে পরিবর্তনআনতে সক্ষম হয়। ২০১০ সালথেকে টেকসই উন্নয়নকে ইউএসএলপি আর কম্পাসের মধ্যমেব্যবসা কৌশল হিসেবে সফলভাবেকার্যকর করার কারণে ইউনিলিভারটানা ১২ বার গ্লোবালস্ক্যানের সমীক্ষা অনুসারে বিশ্বের সেরা টেকসই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

কোভিড–পরবর্তীসময়ে নতুন বাস্তবতা সামনেআসায়, ২০২৩ সালে ইউনিলিভারঘোষণা করে গ্রোথ অ্যাকশনপ্ল্যান (গ্যাপ)। এর ৪টিঅগ্রাধিকার ক্ষেত্র—জলবায়ু, পরিবেশ, প্লাস্টিকস এবং জীবনমান উন্নয়ন।এর উদ্দেশ্য, স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যগুলোদ্রুত এবং পরিমাপযোগ্যভাবে অর্জনকরা, একইসাথে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিবর্তনের পথ তৈরি করা।

আমিনিজে এসব অগ্রাধিকার নিয়েইউনিলিভারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদিপরিকল্পনার বাস্তবিক প্রয়োজনীয়তা ও ফলাফল দেখারসুযোগ পেয়েছি। যেমন কম্পাস-এরদীর্ঘমেয়াদি একটি লক্ষ্য ছিলবর্জ্যমুক্ত পৃথিবী গড়তে অবদান রাখা।প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউনিলিভার যেমন নিজের প্যাকেজিংয়েপুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েছে, তেমনি বর্জ ব্যবস্থাপনার একটিকার্যকরী মডেল প্রতিষ্ঠা করেআমাদের প্যাকেজিংয়ে যত প্লাস্টিক ব্যবহারকরি, তার থেকেও বেশিপ্লাস্টিক সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েছি।বাংলাদেশের মতো প্রেক্ষাপটে এধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, আমাদের দেশে এখনো বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং শিল্পমূলত অনানুষ্ঠানিক খাতের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখানে ভ্যালুচেইনের উন্নয়নে বড় অবদান রাখারসুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশেপ্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসা বর্তমানে দেশের ৩৭% প্লাস্টিককে রিসাইকেলকরছে এবং আরও চাহিদাথাকা সত্ত্বেও রিসাইকেল করার জন্য তারাযথেষ্ট পরিমাণ মানসম্পন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারে না।অথচ প্রতিদিন আমাদের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন থেকেকয়েক‘শ টন প্লাস্টিকবর্জ্য আমরা রিসাইকেল নাকরতে পেরে ল্যান্ডফিলে (ভাগাড়ে) ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছি।এ ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বা সদিচ্ছা নয়, মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ভ্যালু চেইনপ্রতিষ্ঠা না করতে পারাএবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের সচেতনতা।

আমরাযদি এখনই বর্জ্য ব্যবস্থাপনারজন্য সঠিক পরিকল্পনা নাকরি, তাহলে আমাদের শহরগুলোয় হয়তো আগামী দিনগুলোয়শিশুদের খেলার জন্য কোনো মাঠথাকবে না। তাই আগামীদিনের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের সীমিতভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার খুব প্রয়োজন। কাকতালীয়ভাবেএ বছর বিশ্ব পরিবেশদিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ল্যান্ড রিস্টোরেশন বা ভূমি পুনরুদ্ধারকরা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বনায়ন বা মরুকরণ প্রতিরোধযেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শহরে প্লাস্টিক দূষণকমিয়ে ল্যান্ডফিলের ব্যবহার হ্রাস করাও সমানভাবে জরুরি।বিষয়টি নিয়ে এখন থেকেইআমাদের সচেতন হতে হবে।

ভোগ্যপণ্যনিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাথেকে আমি জানি যেভবিষ্যতে যে ধরনের পরিবর্তনআর চাহিদা আসতে যাচ্ছে, সেটাসঠিকভাবে আগে থেকে অনুমানকরা সম্ভব না হলে ব্যবসায়টিকে থাকা কঠিন। তাইআমি মনে করি, আজকেরপরিবর্তিত বাস্তবতায় শুধু প্রতীকী বাদিবসকেন্দ্রিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। এখন প্রয়োজনটেকসই উন্নয়নকে প্রবৃদ্ধির আগামী দিনের মূল কৌশল হিসেবেগ্রহণ করা।

Back to top