টানা তিন বছরের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির পর, নর ইউনিলিভারের সর্বশেষ ৫ বিলিয়ন ইউরো ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
প্রতি মিনিটে বিশ্বব্যাপী ৬০০টি বুইলন কিউব বিক্রয়ের মাধ্যমে এই ব্র্যান্ডটির সাফল্য প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নর ব্র্যান্ডটি দুই শতক আগে একেবারে শুরুর দিকের পণ্য– ড্রাইড স্যুপ, নর বুলিয়ন পাউডার, জেলি এবং কিউব ইত্যাদি বাজারে নিয়ে আসে এবং এখন বিশ্বব্যাপী ৬০% রান্নাঘর ও পেশাদার শেফদের প্যান্ট্রি সহ,সর্বত্র নিজের জায়গা ধরে রেখেছে।
তবে বিশ্বব্যাপী বেস্টসেলার পণ্য হিসেবে বুইলনের মূল শক্তি কী? নরের গ্লোবাল ভিপি ফ্রাংক হেয়ারস্নেপের মতে, এর পুরোটা সম্ভব হয়েছে খাবার-দাবারের পরিবর্তনশীল ট্রেন্ড এবং ভোক্তাদের চাহিদা ও স্বাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কারণে।
একটি ‘গ্লোক্যাল’ অ্যাপ্রোচ
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৯০টিরও বেশি দেশে নরের বুইলন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, এবং ৬৫টিরও বেশি দেশে পেশাদার রান্নার জগতে এর প্রফেশনাল রেঞ্জের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
বৈশ্বিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বুইলন বাজারে[a] নেতৃত্বশীল স্থানে থাকা নরের রয়েছে শক্তিশালী স্থানীয় স্পর্শ।
“আমরা একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড, যাদের শেকড় গাঁথা আছে স্থানীয় খাবারদাবারে।”, ফ্র্যাংক বলেন। “আর বিভিন্ন সংস্কৃতি আর অঞ্চল নিয়ে এই গভীর জ্ঞান আমাদেরকে মানুষের চাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে পণ্যগুলি ডিজাইন করতে সাহায্য করে।”

ভোক্তাদের স্বাদ আর পছন্দ অনুযায়ী সেরা পণ্য
এবং এই ‘গ্লোক্যাল’ অ্যাপ্রোচের ফলে আমরা ধারাবাহিক সাফল্যের দেখা পাচ্ছি।
ল্যাটিন আমেরিকায়, যেখানে সাধারণত নরের উদ্ভাবন ও মার্কেটিং পুরোটাই লাল চালের মতো বিভিন্ন জনপ্রিয় স্থানীয় খাবারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, সেখানে বছরের প্রথম অর্ধাংশেও এই ব্র্যান্ডের মুনাফা দ্বিগুণ হয়েছে।
একইভাবে ফিলিপাইনে চিকেন টিনোলা নামক দেশীয়ভাবে জনপ্রিয় একটি খাবারে নরের চিকেন বুইলন ব্যবহার করে এর স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
যেসব অঞ্চলে স্থানীয় পরিসরে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব রয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর নরের বুইলনগুলো দেহের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে।
উদাহরণস্বরূপ, যেখানে ইথিওপিয়ায় প্রতি দুইজন মানুষের মধ্যে একজন জিংকের ঘাটতিতে ভোগে, সেখানে নর অন্যতম উপাদান হিসেবে,জিংক যুক্ত করে, এর স্টক কিউব পুনরায় বাজারজাত করে/নরের নতুন স্টক কিউবের একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে রয়েছে জিংক। এছাড়াও আমরা ভিটামিন এ উপাদানে ভরপুর একটি পণ্য বাজারে এনেছি, যা দিয়ে তাদের দেশজ খাবার ‘শিরো ওয়াত’, অর্থাৎ মটরশুঁটির একটি স্টু তৈরি করা যায়।
পূর্বে এধরনের উদ্ভাবন বাজারে আসতে অনেক মাস, এমনকি অনেক বছর সময় লেগে যেত, কিন্তু এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এ-আই)-এর সহায়তায় এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। এ বিষয়ে ফ্র্যাংক ব্যাখ্যা দেন, “ব্র্যান্ডটি যখন নর জিরো সল্ট কিউব তৈরি করছিল, তখন বিভিন্ন ডিজিটাল মডেলিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা খুব কম সময়ে লাখো স্বাদের কম্বিনেশন বিশ্লেষণ করে দেখতে সক্ষম হয়েছেন।”
বৈশ্বিক ও স্থানীয় পর্যায়ে ভোক্তাদের নিত্য নতুন চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে নিজস্বতা ধরে রাখার কারণেই প্রতিদিনের রান্নায় নর আজ বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত এবং বর্তমানে ৫ বিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের একটি ব্র্যান্ড হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে।.
ফ্র্যাংক হেয়ারস্নেপ, গ্লোবাল ভিপি, নর
সুবিধা, ধারাবাহিকতা ও শ্রেষ্ঠত্ব
নরের প্রতিটি উদ্ভাবনের পেছনেই কাজ করেছে ভোক্তার সুবিধা। বিশ্ব জুড়ে ঘরোয়া রাঁধুনিরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যান অনেক সময় ধরে খাঁটি স্বাদ তৈরির, তবে নর এই বিষয়টিকে মাত্র কয়েক মিনিটেই সহজ করে দেয়।
পেশাদার রান্নার ক্ষেত্রেও এই সুবিধা বেশ কাজে লেগেছে, যার ফলে ২০২৩ সালে নরের প্রফেশনাল বুইলন এবং সিজনিং ক্যাটেগরিতে ১৫% অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছে।
নরের ব্যবহার হয়ত শেফদের পুরো কাজের মধ্যে অনেক বেশি অংশ দখল করে না, কিন্তু এর নির্ভরযোগ্যতার কারণে সেফদের মধ্যেও এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর মধ্যে ৫৫% শেফ বলেছেন যে এই পণ্যটির মান ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখা হয়েছে এবং কম সময়ে খাঁটি স্বাদ তৈরির যে ধরনের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন তারা হচ্ছিলেন, সেটিও অনেক সহজ হয়ে এসেছে।[b]
ফ্র্যাংক বলেন, “নর বুইলন শেফদেরকে একইসঙ্গে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী সমাধান উপহার দেয়, যার ফলে তারা আরো উদ্ভাবনী এবং সিগনেচার খাবার তৈরি করতে পারেন, এবং এর মাধ্যমে মেনুতে থাকা প্রতিটি রান্নাই হয়ে ওঠে বিশেষ কিছু।”
পরিবর্তনশীল স্বাদ ও ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা
নরের মাধ্যমে অনেক দুর্লভ স্বাদের মিশ্রণকেও সহজ ও নতুন রন্ধনশৈলীর মাধ্যমে উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে।
ব্র্যান্ডটির ইনটেন্স ফ্লেভারস রেঞ্জটির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সহজ উপায়ে ক্যারামালাইজড ইউমামি অথবা ডিপ স্মোকের মতো জটিল সব রান্না সম্পন্ন করা। স্মোকিং, ফার্মেন্টিং ও রোস্টিংয়ের মতো খাঁটি রন্ধন প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরিকৃত এসব বুইলন, মেরিনেটিং থেকে সিজনিং পর্যন্ত রান্নার সামগ্রিক সব ধাপেই ব্যবহার করা যায়।
ইউনিলিভার ফুড সল্যুশন্স ফিউচার মেনু ট্রেন্ডস শীর্ষক রিপোর্টে নরের বুইলনের একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, এবং এর মাধ্যমে গত দুই বছর ধরে তারা বহু ট্রেন্ডিং রেসিপি তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানিয়েছে।

নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন বুইলন
নর বুইলনের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, ইনস্ট্যান্ট ফ্লেভারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছেও ব্র্যান্ডটিকে সমানভাবে জনপ্রিয় করা।
ফ্র্যাংক বলেন, “একটি ফ্লেভার পাওয়ারহাউজ ব্র্যান্ড হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে ঘরোয়া রাঁধুনিদের একটি নতুন প্রজন্ম কে প্রস্তুত ও ক্ষমতায়ন করা, যাদের কাছে থাকবে দারুণ সব সুস্বাদু, পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং সহজ রান্নার রেসিপি।”
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ৬৭% তরুণ ভোক্তা সামাজিক মাধ্যমে খাবার-দাবারের অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। এর জের ধরে তিনি আরো বলেন, “নরের বুইলন ব্যবহার করে নতুন রাঁধুনিরাও খুব সহজে ও কম সময়ে পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার তৈরি করতে পারবে, যা কিনা একইসঙ্গে বিভিন্ন পুরনো রন্ধনশৈলীর সঙ্গে আধুনিকতা যোগ করে এবং খাদ্য সংস্কৃতির জন্য বিনোদনের একটি নতুন ধারার প্রতিফলন ঘটায়।”[c]
এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এর টেস্ট কম্বো ক্যাম্পেইন লঞ্চের মাধ্যমে, ব্র্যান্ডটি সুস্বাদু ঘরোয়া রান্নার উপকারিতায় জোর দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেলিব্রেটির সহায়তা নিয়েছে।
যেমন গত বছর আমেরিকান র্যাপার কার্ডি বি’য়ের পুষ্টিসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী ভাইরাল ডিশ - ‘ম্যারি মি চিকেন’ এই ব্র্যান্ডটিকে এনে দিয়েছে ২.৬ বিলিয়ন ইমপ্রেসন এবং তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান।
এ বছরের ক্যাম্পেইন আরো সফল হতে যাচ্ছে, কেননা এতে থাকছে র্যাপার ও অভিনেতা লুডাক্রিসের স্বাস্থ্যকর রেসিপি ‘লেমন পেপার চিকেন’। ইতোমধ্যেই এই রেসিপিতে ২.৩ বিলিয়ন সংখ্যক ইমপ্রেসন এসেছে এবং ভবিষ্যতে আরো আসবে।
ফ্র্যাংক বলেন, “রান্নাঘরের আলমারিতে থাকা একটি আবশ্যক উপাদান থেকে শুরু করে, এক অপরিহার্য রান্নার কৌশল হিসেবে আমরা আসন্ন বহু প্রজন্মের ভোক্তাদের কাছে বুইলনের একটি নতুন ইমেজ রেখে যাচ্ছি।”
“বৈশ্বিক ও স্থানীয় পর্যায়ে নতুন ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে, উদ্ভাবনের মধ্য দিয়েও এর নিজস্বতা ধরে রাখার কারনেই প্রতিদিনের রান্নাঘরে নর আজ বিশ্বব্যাপী এত সুপরিচিত এবং বর্তমানে ৫ বিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের একটি ব্র্যান্ড হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করেছে।”
বাংলাদেশে নর
২০১১ সালে জনসাধারণের জন্য খাদ্যপণ্য নতুন করে উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাহারি স্বাদের সব স্যুপ নিয়ে নর বাংলাদেশে চালু করা হয়। আমাদের বিশ্বাস ভালো খাবার জীবনে আনন্দ আনার সাথে প্রতিদিনের আহারের মুহূর্তগুলোকে করে তোলে ম্যাজিকাল।