Skip to content

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের অংশীদার ইউনিলিভার বাংলাদেশ

Published:

একটা সময় সাবান অথবা শ্যাম্পু ছিল এ দেশের বনেদি ঘরের প্রসাধনীর তালিকায়। সাধারণের কাছে এসব বিশ্বমানের পণ্য সহজলভ্য করার মতো অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছিল নিত্য-ব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) উৎপাদন ও বিপণনকারী ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল)। শুধু সাবান শ্যাম্পুর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ভোক্তাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে প্রায় সব ধরনের নিত্য-ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম যাত্রা শুরু করে ইউবিএল। বর্তমানে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন জাভেদ আখতার, যিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ইউনিলিভারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বৈশ্বিক বৃটিশ কোম্পানি ইউনিলিভারের অংশ ইউবিএল- এর সদর দপ্তর যুক্তরাজ্যে।

Young Girls in Lifebuoy's Handwashing Campaign

লিভার ব্রাদার্স থেকে ইউনিলিভার হওয়া বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৯০টি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশে এই প্রতিষ্ঠানের ৮টি ফ্যাক্টরি রয়েছে, যার একটি নিজস্ব ফ্যাক্টরি এবং বাকি ৭টি কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের আওতায় ইউনিলিভারের তত্ত্বাবধানে মানসম্পন্ন পণ্য প্রস্তুত করে থাকে। ইউবিএল- এর উৎপাদিত ৯৫ শতাংশ পণ্যই স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত হয়।

ইউনিলিভার বাংলাদেশকে এখন কেবল একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি দেশি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকারের ৩৯.২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ‘ইউনিলিভার বাংলাদেশ’ এ। ফলে এ প্রতিষ্ঠানের মুনাফার একটি বড় অংশ সরকারের মাধ্যমে দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে বিশ্বমানের পণ্য সরবরাহ করায় দেশের প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে সাড়ে ৯টি পরিবারেই ইউনিলিভারের পণ্য ব্যবহৃত হয়, যা মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

দেশের মানুষকে মানসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করতে বাংলাদেশে ইউবিএল- এর ছয় দশকের যাত্রায় যুক্ত হয়েছে লাইফবয়, ক্লোজআপ, পেপসোডেন্ট, গ্লো অ্যান্ড লাভলী, হুইল, রিন, ভিম, ডাভ, সানসিল্ক ও ক্লিয়ারের মতো নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে সাবান তৈরির ফ্যাক্টরি থেকে শুরু করে বর্তমানে দেশে ২৬টিরও বেশি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম এফএমসিজি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে ইউবিএল। জনগণের দোড়গোড়ায় বিশ্বমানের নিত্যপণ্য পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন সাধন করা, দাঁতের যত্ন ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান।

প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদানে ইউনিলিভারের অন্যতম একটি উদ্যোগ লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল (এলএফএইচ)। ২০০৩ সালে ইউনিলিভারের পণ্য লাইফবয় ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জাহাজের ওপর ভাসমান এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত হাসপাতালটির মাধ্যমে ছয় লাখেরও বেশি চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে ইউবিএল।

নব্বইয়ের দশক থেকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশের শিশু ও অভিভাবকদের হাত ধোয়া প্রশিক্ষণ এবং দাঁত পরিষ্কার রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে আসছে ইউনিলিভার। শুধু ২০২১ সালেই ইউবিএল এই প্রোগ্রামের আওতায় সারাদেশের পাঁচ কোটি জনগণের কাছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে, যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) পাঁচটি লক্ষ্য পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও, করোনা মহামারির সময় বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের সহায়তা করতে ৪৫ লাখ প্রয়োজনীয় কিট সরবরাহের পাশাপাশি ৮ কোটি টাকার হেলথ অ্যান্ড হাইজিন পণ্য সহায়তা প্রদান করেছে এফএমসিজি প্রতিষ্ঠানটি।

দেশের প্লাস্টিক সার্কুলারিটি অর্জনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং ইপসা (ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন)-এর সঙ্গে কাজ করেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২২ সাল থেকে চসিকের মধ্যে প্রতিদিনের প্রায় ১০ শতাংশ প্লাষ্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে প্লাষ্টিক সার্কুলারিটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রায় তিন হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর জীবিকার উন্নয়ন ঘটেছে। ‘ইউনিলিভার কম্পাস’ শীর্ষক বৈশ্বিক টেকসই ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে ‘ক্লাইমেট ট্রানজিশন অ্যাকশন প্ল্যান’ এর আওতায় কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ইউনিলিভার তাদের কার্যক্রমে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারে এবং ২০৩৯ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ভ্যালু চেইন জুড়ে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা একেবারেই শূন্য হয়।

‘পল্লীদূত’ প্রকল্পের মতো নানা উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প শিক্ষিত বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরির জন্য ‘বিজমায়েস্ট্রোস’ এর মতো বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। জনশক্তি গড়ে তোলায় এটি সবার কাছে ‘স্কুল অব লিডার্স’ নামেও পরিচিত। ‘এমপ্লয়ার অব চয়েস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতিও রয়েছে তুঙ্গে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণকে শক্তিশালী করতে ডাইভার্সিটি, ইকুইটি অ্যান্ড ইনক্লুশন- এর মতো উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি তরুণ এবং বাংলাদেশের ১০ লাখ তরুণকে দক্ষ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এ অনন্য উদ্যোগ শুধু ইউনিলিভারে কাজ করা ব্যক্তিদেরই নয়, বরং ভ্যালু চেইনে যুক্ত সকলকেই প্রভাবিত করে।

ইউনিলিভার শীর্ষ করতাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ কয়েকবার পুরস্কার অর্জন করেছে। গত বছর ইউবিএল ‘এনভায়রনমেন্ট ক্যাটাগরি’তে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’; একটি বৈচিত্র্যময়, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক কর্মশক্তি তৈরির লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণে অনন্য দৃষ্টান্ত অর্জন করায় ‘এফআইসিসিআই ডিইআই চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্টস (এসিসিএ) এর কাছ থেকে ‘এসিসিএ অনুমোদিত এমপ্লয়ার প্লাটিনাম’- এর স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ সি-সুটস এওয়ার্ডস-২০২৩’ অর্জন করেন ইউবিএল- এর ম্যানেজমেন্ট কমিটির দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে ইউবিএল। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক প্রগতি আর পরিবেশ সংরক্ষণ করার লক্ষ্য রয়েছে এই কোম্পানির। এসব লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে জাতিসংঘের বৈশ্বিক লক্ষ্য এবং দেশের ২০৪১ সালের রূপকল্প অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউনিলিভার বাংলাদেশ।

Back to top