Skip to content

কর্মক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ‘৫০/৫০ বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা’ পূরণের পথে ইউনিলিভার বাংলাদেশ

Published:

“আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীরূপ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে?” নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার এই প্রশ্নের মধ্যেই একটি বিষয় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আর তা হলো, এককভাবে পুরুষের কর্মক্ষমতা কাজে লাগালে কোনো দেশ বা সমাজের পক্ষে পুরোপুরি উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। একটি সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে যেমন নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ও অবদান জরুরি, ঠিক তেমনি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা উন্নত হয়েছে।

Unilever Bangladesh Employees with Gender Balance at Workspace

গত এক দশকে মেয়েদের শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দেশের অর্জন অনুকরণীয়। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সমাজের টেকসই পরিবর্তনের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। তবে আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে এখনো নারীরা নানাবিধ বৈষম্যের শিকার হওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে কার্যকরি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক সুযোগ-সুবিধা বা ইনস্টিটিউশনাল সাপোর্ট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নারীদের সমতা ও সাম্যতা নিশ্চিত করায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) অন্যতম।

এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ইনভেস্ট ইন ওমেন: এক্সিলারেট প্রগ্রেস’। ইউনিলিভার বাংলাদেশ একটি টেকসই অবকাঠামো তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানের পুরো কর্মপ্রক্রিয়া জুড়ে নারীর সমান অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণে কাজ করছে ইউনিলিভার। উৎপাদন থেকে শুরু করে মাঠপর্যায় বিপণন এবং একেবারে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরের নারীদের পর্যাপ্ত অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে ইউবিএল। সারা দেশে কোম্পানির মোট ৯৭টি বিক্রয় অঞ্চলের মধ্যে ৪৮টি অঞ্চলকে নারীকর্মীবান্ধব অঞ্চল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ইউবিএল- এর লক্ষ্য হলো, এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রান্তিককরণের অবসান ঘটানো, যারা শুধুমাত্র তাদের পরিচয়ের কারণে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ কম পায়।

প্রতিষ্ঠানটি নারী ব্যবস্থাপকদের আনুপাতিক হার বৃদ্ধি করতে ২০১০ সালে ‘৫০/৫০ বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা’ হাতে নেয়। এক দশকেরও কম সময়ের ব্যবধানে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির এই যাত্রায় ইউনিলিভার বাংলাদেশে নারী ব্যবস্থাপকদের আনুপাতিক হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এছাড়াও, ইউবিএল এর সর্বোচ্চ পর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটিতেও নারী নেতৃত্ব আনুপাতিক হার লক্ষ্যমাত্রার দ্বারপ্রান্তে। এই সাফল্য অর্জনে ডিইআই অর্থ্যাৎ ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনক্লুশন- কৌশলের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণকে আরও শক্তিশালী করতে প্রতিষ্ঠানের পুরো কার্যক্রম জুড়ে প্রোঅ্যাক্টিভ ট্যালেন্ট ম্যাপিংকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ অনন্য উদ্যোগ শুধু ইউনিলিভারে কাজ করা ব্যক্তিদেরই নয়, বরং ভ্যালু চেইনে যুক্ত সকলকেই প্রভাবিত করে।

ফ্যাক্টরি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নারীদের নিয়োগ প্রদান এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করা, মাঠ পর্যায়ে বিক্রয় বিভাগে নারীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়াসহ ইউনিলিভারের বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি অংশকে আরও বৈচিত্র্যময় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ সাল থেকে কোম্পানির কালুরঘাট কারখানার (কেজিএফ) শপ ফ্লোরে নারী কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে ইউবিএল। এছাড়াও রাতের শিফটে বিশ্রামাগার, ওয়াশরুম, প্রার্থনা কক্ষ, ক্যান্টিন সুবিধা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করেছে নারীদের জন্য। বর্তমানে কারখানার শপ ফ্লোর, সাধারণ হাউসকিপিং ও নিরাপত্তা বিভাগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নারীব্যবস্থাপক এবং নারী কর্মচারী রয়েছে।

ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্রথম এমন প্রতিষ্ঠান, যারা নারীদের জন্য একটি অনুকূল কর্মপরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে বিক্রয় বিভাগকে নেতৃত্ব দিতে ‘ফিমেল রিজিওনাল ম্যানেজার’ নিয়োগ করার পাশাপাশি তাদের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে। সারাদেশে নারীবান্ধব, সুরক্ষিত ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের উন্নয়নে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এই লক্ষ্যে তারা কর্মজীবী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে উন্নয়ন সংস্থা ‘ভূমিজ ফাউন্ডেশন’-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউশন হাউজগুলোতে নারীবান্ধব ওয়াশ সুবিধা তৈরি ধারাবাহিকভাবে করেছে। এছাড়াও ইউবিএল বেশ কয়েকটি নারীবান্ধব বিক্রয় এলাকা তৈরি করেছে যেন আরো বেশি সংখ্যক নারী এই পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ হয়।

ইউবিএল ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের সুবিধার্থে ‘স্ট্রাইড’ প্রকল্প শুরু করে, যেটির আওতায় নারীরা প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘ক্যারিয়ার ব্রেক’ বা চাকরিতে কর্মবিরতি নিয়ে পুনরায় কাজে যোগ দিতে পারেন। কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে ইউনিলিভারের কর্পোরেট অফিসে আধুনিক শিশু সদনও (ডে কেয়ার) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের টঙ্গী কারখানা থেকে শুরু করে ইউনিলিভারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

পেশাজীবী নারীদের উৎসাহ দিয়ে তাদের সাফল্য অর্জনে সহযোগিতার জন্য রয়েছে ইউবিএল- এর “শি ফর শি”, যেখানে তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তা-ভাবনা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন ও একে অপরকে সহযোগিতা, উৎসাহ ও উদ্বুদ্ধ করে একটি সামগ্রিক নারী সহায়ক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেন। নারীদের শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজনে পাশে থাকার জন্য ইউবিএল- এর আরেকটি প্ল্যাটফর্ম হলো #স্ট্যান্ডস্ট্রং। শুধু তাই নয়, মাতৃত্ব-কালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মজীবনে বিরতি, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, পরিবারে হয়রানির শিকার হওয়া কর্মীদের সমর্থন করা এবং বিনিময়যোগ্য ছুটির নীতিও বাস্তবায়ন করেছে ইউবিএল।

নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে ইউনিলিভারের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হলো অভিজাত ব্র্যান্ড ‘ডাভ’ এর সেলফ-এস্টিম প্রজেক্ট (ডিএসইপি)’, যার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ২৫০ মিলিয়ন তরুণ-তরুণীর সৌন্দর্য্য ও আত্মবিশ্বাসহীনতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করার লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৪২টি দেশের সাড়ে ৩ কোটি তরুণ-তরুণী এই ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ‘রিন নামকরা নারী’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা আত্মপরিচয় তৈরি করা নারীদের গল্প সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে অন্য নারীদের অনুপ্রাণিত করার কাজ করছে ব্র্যান্ডটি। এছাড়া, ইউনিলিভারের ‘গ্লো অ্যান্ড লাভলী’ও নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বহু বছর ধরেই।

Back to top