টেকসই উন্নয়নকে ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে ইউনিলিভার বাংলাদেশ সবসময়েই প্রসিদ্ধ। বাংলাদেশে স্বচ্ছ এবং কার্যকরী টেকসই উন্নয়ন উদ্দ্যোগ গ্রহন করা ও বিভিন্ন সফলতা অর্জনের মাধ্যমে আমরা তৈরি করেছি এক নতুন মাত্রা।
প্লাস্টিকের সার্কুলারিটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা গড়ে তোলা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইউবিএল) উদ্যোগকে বেস্ট সাসটেইনবেল পার্টনারশিপ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন ইনিশিয়েটিভের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠান জুড়ে সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির (ইডিআই) চর্চাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ইউবিএলকে এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। তার পাশাপাশি, ইউবিএলের আরও দুটি উদ্যোগ, রেসপন্সিবল কনজাম্পশন অ্যান্ড প্রোডাকশন, এবং ইন্ড্রাস্টি-ইনোভেশন অ্যান্ড ইনফ্রাসটাকচার, পেয়েছে বিশেষ সম্মাননা।
সাসটেইনেবল পার্টনারশিপ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনস ক্যাটাগরিতে ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন
প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উদ্যোগের জন্য আমরা সাসটেইনেবল পার্টনারশিপ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনস ক্যাটাগরিতে অর্জন করেছি আমাদের প্রথম এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার উন্নয়নের জন্য আমরা সবসময়েই সক্রিয় ভাবে কাজ করে আসছি। আমাদের উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে পদ্ধতিগত পরিবর্তন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল এবং সার্কুলার অর্থনীতির বিকাশ।
বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যরে সার্কুলার ভ্যালুচেইন প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হয় পরিজ্ঞান সংগ্রহ এবং ফিল্ড টেস্টিংয়ের মাধ্যমে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সাথে মিলে ৪টি ভিন্ন ইন্টারভেনশন মডেলের সফল মাঠপরীক্ষার পর, আমরা আমাদের উদ্যোগটিকে পুনরায় ডিজাইন করে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করার অনুপ্রেরণা এবং আত্নবিশ্বাস পাই।
২০২২ সালে, আমরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) এবং চট্টগ্রামভিত্তিক এনজিও ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা)-এর সাথে যৌথভাবে শহরজুড়ে আমাদের কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের মাধ্যমে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভ্যালু চেইন অংশীদারদের ক্ষমতায়ন এবং সার্কুলারিটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বর্তমানে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশনের মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ১০% ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে। এ পর্যন্ত আমরা ১৪,০০০ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ করেছি।
উৎপাদন খাতে নারী অন্তর্ভুক্তি এবং নেতৃত্ব নিশ্চিত করায় এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড
দ্বিতীয় মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ডটি আমরা অর্জন করেছি ওম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট ক্যাটাগরিতে। উৎপাদনখাতে নারী অন্তর্ভূক্তি এবং নেতৃত্ব নিশ্চিত করায় ইউনিলিভার বাংলাদেশকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। ইউনিলিভার বাংলাদেশের নারী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত কালুরঘাট কারখানার (কেজিএফ) পরিবর্তনের মাধ্যমে।
কারখানার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি, উৎপাদন খাতে প্রতিভাবান বৈচিত্রপূর্ন কর্মীর সুযোগ করে দেয়ার জন্য লিঙ্গভিত্তিক এবং সামাজিক বৈষম্য দূর করা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালে, ইউনিলিভার কেজিএফ-এর একটি সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়, যার লক্ষ্য ছিল যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। নির্দিষ্টভাবে নিয়োগ, পরামর্শ এবং নারী নেতৃত্বে বিকাশের মাধ্যমে এই কারখানাটি দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্যহীনতার একটি মডেলে পরিণত হয়েছে, যা বিভিন্ন স্তরে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ইউনিলিভার ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত পদে নারীদের নিয়োগের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। এর ফলে ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইনে এখন ৩৫% নারী কর্মী রয়েছে, এবং কালুরঘাট কারখানায় ২৬% নারী ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০%-এ নিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য।
একটি কাঠামোবদ্ধ গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেইনি প্রোগ্রামও চালু করা হয়েছে, যেখানে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ৬৪%। এই প্রোগ্রাম নারী প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন অবকাঠামোগত পরিবর্তন, যেমন নার্সারি প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং বিভিন্ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কারখানার কাজ নারীদের জন্য আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।
এই অর্জন আমাদের উৎপাদন খাতে নারীদের অন্তর্ভূক্তি এবং সমতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকেই সেলিব্রেট করে। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা কেবল লিঙ্গ সমতা বাড়ায়নি, বরং টেকসই ব্যবসায়িক কার্যক্রমে আমাদের নেতৃত্বের ভূমিকাও শক্তিশালী করেছে।
রেসপনসিবল কনজাম্পশন এবং প্রোডাকশন ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননা
আমাদের উদ্যোগ, ইউরিফিল: ড্রাইভিং সাসটেইনেবল কনজিউমার বিহেভিয়ার চেঞ্জ, রেসপনসিবল কনজাম্পশন এবং প্রোডাকশন ক্যাটাগরিতে পেয়েছে বিশেষ সম্মাননা। বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল এমন একটি রিফিল প্রযুক্তি তৈরি করা, যা ছোট-ছোট খুচরা দোকানগুলোর উপযোগী হবে। কারণ দেশের ৯৫% এরও বেশি ভোগ্য পণ্য বিক্রি হয় দুই মিলিয়নের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের খুচরা দোকানের মাধ্যমে। এই দোকানগুলো সাধারণত সীমিত আয়ের ভোক্তাদের সেবা দেয়, যারা অল্প পরিমাণে এবং সুবিধামত কেনাকাটা করেন। ২০২৩ সাল থেকে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বপইনক নামে একটি বৈশ্বিক সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে কাজ করছে। বপইনক স্কেলেবল রিফিল সমাধানের জন্য এমন একটি পরীক্ষা চালিয়েছে যা খুব ছোট দোকানগুলোর ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।
ছোট খুচরা দোকানে রিফিল প্যাকেজিং ব্যবস্থা চালু করে ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইউরিফিল মেশিন ৯০% পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যবহারে কমায়, খরচ কমায় এবং একটি সার্কুলার অর্থনীতির পদ্ধতিকে সচল রাখে।
হার্নেসিং এনভায়রমেন্টাল সাসটেইনিবিলিটি টুওয়ার্ডস এ গ্রীনার টুমরো ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননা
আমাদের আরো একটি উদ্যোগ বিশেষ সম্মাননা পেয়েছে হার্নেসিং এনভায়রমেন্টাল সাসটেইনিবিলিটি টুওয়ার্ডস এ গ্রীনার টুমরো ক্যাটাগরিতে। টেকসই উন্নয়নকে আমাদের কার্যক্রমের মূলমন্ত্র হিসেবে ধারণ করে আমরা এমন উদ্যোগ পরিচালনা করছি যা সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইউনিলিভার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন কালুরঘাট কারখানা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী টেকসই প্রয়াসের একটি বড় উদাহরণ।
২০১০ সাল থেকে আমরা বিভিন্ন পানি সংরক্ষণ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের প্রকল্প চালু করেছি, যা আমাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করেছে। আমাদের ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত করেছি বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, পরিশোধিত পানি পুনরায় ব্যবহার এবং রিভার্স অসমোসিস (RO) প্রযুক্তি। প্রক্রিয়া পরিবর্তন ও উৎপাদনের দক্ষতা বাড়ানোর ফলে আমাদের পানির সঞ্চয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে উৎপাদন কারখানায় প্রতি টন পণ্যের জন্য ব্যবহৃত পানির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫০%। এছাড়াও আমরা নিয়ে এসেছি উন্নত জ্বালানি সাশ্রয় প্রযুক্তি, যেমন কার্যকর চিলার ও স্টিম পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা। ২০১৪ সালে অর্জন করেছি ‘জিরো-ওয়েস্ট টু ল্যান্ডফিল’ স্থিতি এবং এই সাফল্য ধরে রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে ইউনিলিভার বাংলাদেশ টেকসই উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং দায়িত্বশীল ব্যবসা চর্চার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আগামীর সম্ভাবনাঃ আরো শক্তিশালী টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি
এই এ্যাওয়ার্ড অর্জনগুলো আমাদের টেকসই উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করা প্রচেষ্টাগুলোকে তুলে ধরে। ইউনিলিভার বাংলাদেশে জানে যে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাই নতুন উদ্ভাবন এবং একসাথে কাজ করার মানসিকতা। এই স্বীকৃতি আমাদের ব্যবসায়িক কাজের সঙ্গে টেকসই উন্নয়নকে আরও ভালোভাবে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে। যা আমাদের ২০২৩ সালের গ্রোথ অ্যাকশন প্ল্যানের (GAP) সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই সাফল্য উদযাপনের সাথে সাথে টেকসই উন্নয়নের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিতে থাকবো অটল। আমাদের যাত্রা এখানেই শেষ নয়; আমরা অব্যাহত রাখবো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করার প্রচেষ্টা। এই স্বীকৃতিগুলো আমাদের উদ্ভাবন ও সহযোগিতার নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে অনুপ্রাণিত করে, যাতে করে আমরা পৃথিবী ও মানুষের জীবন ওপর রাখতে পারি ইতিবাচক প্রভাব।