Skip to content

প্রবৃদ্ধির জন‍্য গেইমিংএ কেন বিনিয়োগ করছে ইউনিলিভার?

Published:

ইএএফসি, ফোর্টনাইট ও রোব্লক্সের মতো প্লাটফর্মের সাথে ইউনিলিভারের পার্টনারশিপ আমাদের পার্সোনাল কেয়ার ব্র‍্যান্ডগুলোকে নতুন বা ভবিষ্যৎ কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করছে। চলুন দেখি কিভাবে গেমিংয়ের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিতে জয় অর্জনের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

ইউনিলিভারের রেক্সোনা ব্র্যান্ডের একটি ছবি। ফুটবল কিট পরা ছয়জন মহিলা ফুটবল খেলোয়াড়ের অ্যানিমেটেড অ্যাভাটার

২০২৪ সালে ওয়াইপালস এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইউএস ও কানাডার কিশোর কিশোরীরা টিভি দেখার বদলে, গেইম খেলায় বেশি সময় দিচ্ছে। তাদের মধ‍্যে ৬৮% মনে করে, টিভি বা মুভি দেখার চেয়ে ভিডিও গেইম বেশি আনন্দের।

২০২৩ সালের নিউজু’র রিপোর্টও এমন তথ‍্যই দিচ্ছে। তাদের রিপোর্ট বলছে, জেন জিরা সপ্তাহে গড়ে ১২ ঘন্টারও বেশি সময় কাটায় এইসব গেইম খেলে যা টিভি দেখার থেকে বেশি এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ১৩.৯ ঘন্টা সময় কাটানোর কাছাকাছি চলে আসছে।

ফলে এটা স্পষ্ট যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভোক্তারা গেইমিং-এর মাধ্যমে বিনোদনে আগ্রহী হবে। ভবিষ‍্যতে গেইমিং থেকেও ভোক্তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। আর এর আওতা আমাদের ধারণারও বাইরে।

এন্টারটেইনমেন্ট সফট্ওয়‍্যার এসোসিয়েশন (ইএসএ) এর এক গবেষণায় দেখা গেছে ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেইমারদের গড় বয়স ছিলো ২৯ বছর। ২০২৪ এসে সেই বয়স-সীমা বেড়ে পৌঁছেছে ৩৬ এ। ২০২৩ সালে ‘গ্লোবাল গেইমার’ স্টাডির গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে, ৪৫% গেইমার নারী। পৃথিবীর জনসংখ‍্যার এক তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে এখন গেইমিং পৌঁছে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ‍্যে গেইমিংএ আকৃষ্ট মানুষের সংখ‍্যা বিশ্বজুড়ে দাঁড়াবে ৩.১ বিলিয়নে।

বৈচিত্রপূর্ণ মার্কেটিংয়ে বিনিয়োগ করার পুরনো ইতিহাস আছে আমাদের। কারণ আমরা মনে করি, মার্কেটিংয়ের প্রভাব থাকার জন্য যেখানেই কাস্টমারের উপস্থিতি থাকবে, সেখানেই আমাদের ব্র‍্যান্ডগুলিকেও তাদের সামনে দেখাতে হবে।

ভবিষ্যতে কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ‍্যম হয়ে উঠবে এই গেইমিং। সেকারণে দ্রুত বেড়ে চলা এই গেইমিং সেক্টরে ইউনিলিভার বিগত তিন বছরে তার ইনভেস্টমেন্ট তিনগুণ বাড়িয়েছে, যার কারণে এই সেক্টরে আমাদের পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টগুলোও এখন সামনের কাতারে রয়েছে।

ভবিষ্যৎ কাস্টমার পেতে গেইমিং এর মাধ‍্যমে মার্কেটিং

ভিডিও গেইমে ডিওডোরেন্টস্, শাওয়ার জেল বা টুথপেস্টের মতো পণ‍্যের বিজ্ঞাপন প্রচারকে অপ্রচলিত মার্কেটিং পদ্ধতি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু পণ‍্য সম্পর্কে কনজ‍্যুমারের মন মানসিকতা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তুলে আনছে গেইমিং।

ইউনিলিভারের গবেষণা বলছে, ৭০% গেইমার পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট ব‍্যবহারে দারুণভাবে আগ্রহী। যাদের মধ‍্যে ৪৫% প্রিমিয়াম ডিওডোরেন্ট ও বডি স্প্রে কেনেন। নন গেইমারদের মধ‍্যে সেই সংখ‍্যা মাত্র ৩৫%।

ইউনিলিভারের স্পোর্টস এ‍্যান্ড এন্টারটেইমেন্ট পার্টনারশিপ এ‍্যান্ড পার্সোনাল কেয়ার মিডিয়া প্রধান উইলেম ডিঙ্গারের মতে, গেইমিং এখন নতুন এক সামাজিক মাধ‍্যম।

তিনি আরো জানান, “দ্রুত বাড়তে থাকা এই গেইমিং জগতে নতুন কাস্টমার, যারা মূলত জেন জি ও নারী - তাদের কাছে আমাদের প্রোডাক্টগুলোকে তুলে ধরছি। গেইমিং এর সাথে যুক্ত মানুষের সংখ‍্যা যেহেতু রকেট গতিতে বাড়ছে তাই আমরাও এসব কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করার চেষ্টা করছি নতুন এই মার্কেটিং চ‍্যানেলের মধ‍্যে দিয়ে।”

২০২০ সালে আমরা ইউপ্লে চালু করি যাতে আমাদের ব্র‍্যান্ডগুলোকে গেইমিং সংস্কৃতির সামনের সারিতে নিয়ে আসা যায়। এরপর ইউনিলিভারের মধ‍্যেই ৩০জনেরও বেশি সদস‍্য নিয়ে একটি গেইমার কমিউনিটি গড়ে তুলি, যারা আমাদের মার্কেটিং দলকে গেইমিং জগতের স্ট্রিমারস্, ক্রিয়েটার, ব্রডকাস্টার এবং ইনফ্লুয়েন্সারের সাথে কাজ করতে সহযোগিতা করেছে।

তারপর থেকে আমাদের পার্সোনাল কেয়ার ব‍্র‍্যান্ডস্ গেইমিং এর লিডিং প্ল‍্যাটফর্মগুলোতে পার্টনারশিপের ভিত্তিতে কাজ করতে শুরু করে। তারা এ কাজে এমন সব ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে যা গেইমারদের মনোযোগ আকৃষ্ট করছে। আমরা এমন সব কন্টেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি, যা কন্টেন্টে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, কনজ‍্যুমারদের সম্পৃক্ত করেছে, এবং একটি গল্প তৈরি করে আমাদের ব্র‍্যান্ডগুলোকে গেইমের অবিচ্ছেদ‍্য অংশে পরিণত করেছে।

এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যাক…

ইউপ্লে এর লোগো

ফিফার সাথে ইউনিলিভারের পার্টনারশিপের সুবিধা

ইউনিলিভারের পার্সোনাল কেয়ার ব্র‍্যান্ডগুলো ২০২৩ ফিফা নারী বিশ্বকাপকে স্পনসর করেছিলো। এই টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে আমরা ফিফা ওয়ার্ল্ডের এক্স রোবলক্সের সাথে কাজ করে একটি বাধা পেরোনোর গেইম— ‘রেক্সোনা অবি’ চালু করি।

এই গেইমটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিনিটি রডম‍্যান, ইংল‍্যান্ডের লরেন জেমস্ ও জার্মানির মেলানি লিউপোলজের মতো প্লেয়ার এ‍্যাম্বাসেডরদের ডিজিটাল অ‍্যাভাটার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিলো। ফলাফল হিসেবে, ৫৪টি ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে ৫ মিলিওনের মতো ইম্প্রেশন ও এক মিলিওনেরও বেশি ভক্ত এই গেইম প্ল‍্যাটফর্মে সম্পৃক্ত হয়।

আমাদের ব্র‍্যান্ডগুলো ফিফা ই ফাইনালস্ ২০২৩ কে স্পনসর করে এ‍্যাক্সের সাথে ‘পাওয়ার আপ ইওর গেইম উইথ এ‍্যাক্স’ ক‍্যাম্পেইনও শুরু করেছিলো। এটি ছিলো একটি ভাইরাল মার্কেটিং উদ‍্যোগ যার মূল লক্ষ‍্য গেইমারদের মনোবল বাড়ানো। ক্যাম্পেইনটি ২.৯ মিলিওন ইম্প্রেশন, এক লক্ষেরও বেশি ইন্টারঅ্যাকশন এবং ১.১ মিলিয়ন ভিডিও ভিউ পেয়েছিলো।

এ‍্যাক্স ও ফোর্টনাইট দুটির সহযোগিতায় তৈরি হয় মিস্টাভার্স

২০২২ সালে, এ‍্যাক্স ও ফোর্টনাইট যৌথভাবে একটি ব‍্র‍্যান্ডেড ম‍্যাপ তৈরি করে, যেখানে খোলোয়াড়রা প্রতিবার একটি বিশেষ অ‍্যাক্স ক‍্যান স্প্রে করে পাওয়ার আপ পেতেন।

এই ক‍্যাম্পেইনটি ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মিডিয়া ইমপ্রেশন তৈরি করেছিলো। সেই সাথে এটি দ্রুত ফোর্টনাইটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০০টি ম‍্যাপের অন‍্যতম একটিতে স্থান করে নেয়। আর প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ‍্যেই গড়ে ১৮ মিনিট প্লে ও মোট ৭৫,০০০+ প্লে হয়।

এ‍্যাক্স এবং ফোর্টনাইটের পার্টনারশিপের ছবি - এন্টার দ্য মিস্টাভার্স

লাইফবয়ের ভার্চুয়াল দুনিয়া মাইনক্রাফ্টের মাধ‍্যমে সত‍্যিকার প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে সাহায‍্য করে

২০২৩ সালে, ভারতের ২০ মিলিয়নেরও বেশি শিশু মাইনক্র‍্যাফ্ট খেলেছে। মাইনক্র‍্যাফটের সাথে কাজ করে লাইফবয় ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ‍্যমে এমন একটি জগৎ তৈরি করেছিল যা গেইমারদের ভার্চুয়াল গঙ্গানদী থেকে প্লাস্টিক তুলতে উৎসাহিত করে।

‘গিফট্ অব দ‍্য গঙ্গা’ গেইমে যত প্লাস্টিক ভার্চুয়ালি তোলা হয়েছিলো, সেই পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ‍্য পরিষ্কার করবে এই প্রতিশ্রুতি দেয় লাইফবয় এবং এই প্লাস্টিক বর্জ্য রূপান্তর করে সারা দেশে ব্র‍্যান্ডেড হাত ধোয়ার স্টেশন তৈরি করা হবে।

ইএএফসির সাথে ইউনিলিভারের নতুন সহযোগিতা চুক্তি

ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু অপেক্ষা করছে সেটা বলাই যায়। ইএএফসি হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্পোর্টিং সিমুলেশন ফ্র্যাঞ্চাইজি, যেখানে ৫০ মিলিয়ন খেলোয়াড় বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত আছেন, যাদের ৩১% ব্যবহারকারী নারী।

২০২৪ সালের জুনে, ইউনিলিভার পার্সোনাল কেয়ার ইএএফসির সাথে একটি পার্টনারশিপ চুক্তি সই করে, যার মাধ্যমে রেক্সোনা ও অ্যাক্সের মতো পাওয়ার ব্র্যান্ডগুলির সাহায্যে গেমে নতুনভাবে যুক্ত হওয়ার নতুন পথ তৈরি হবে।

এই দুটি ব্র্যান্ডই ২০২৪ এর উয়েফা ইউরোস™️-এর খেলার সময় ইএএফসির সাথে মিডিয়া স্পনসরশিপ শুরু করে, যা ইএএফসি আলটিমেট টিম মোডে (বিশ্বব্যাপী ৩৪ মিলিয়ন খেলোয়াড় এরিমধ‍্যে খেলেছে) ব্র্যান্ড প্লেসমেন্ট তৈরি করেছে। এতে ৩.৪৮ বিলিয়ন ইম্প্রেশন এসেছে।

আমরা আমাদের গেইমিং স্ট‍্র‍্যাটেজিতে বড় ধরনের সাফল‍্য পেয়েছি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই গেইমিং সেক্টরে আমাদের প্রতিশ্রুতি এতো ব্যাপকতা পেয়েছে এই অনুধাবন থেকে যে, ই-স্পোর্টস ভবিষ্যতের কালচার পরিবর্তনের শক্তিশালী মাধ্যম হবে।

উইলেম ডিঙ্গার, ইউনিলিভারের গ্লোবাল হেড অব স্পোর্ট ও এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনারশিপস এবং পার্সোনাল কেয়ার মিডিয়া লিড

তিনি আরও মনে করেন “গেইমিং এখন মানুষের বিনোদনের একটি কেন্দ্রীয় উৎসে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নতি এর অগ্রগতিকে আরো গতিশীল করবে। আমরা বিশ্বাস করি যে গেইমিংয়ে আমরা আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারবো - আর এটাতো কেবল মাত্র শুরু।“

Back to top