Skip to content

ক্লাইমেট ট্রানজিশন অ্যাকশন প্ল্যানে পরিবর্তনঃ সময়ের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা

Published:

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ইউনিলিভারের নতুন ক্লাইমেট ট্রানজিশন অ্যাকশন প্ল্যান (সিটিএপি)। ইউনিলিভার বিশ্বাস করে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্ল্যানের সূদুরপ্রসারী প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও এই উদ্যোগ নিয়ে আসবে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।

ইউনিলিভারের কর্মীরা সোলার প্যানেলের পাশ দিয়ে হাঁটছেন

সুদুরপ্রসারী ও টেকসই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করাই ইউনিলিভারের মূল উদ্দেশ্য। এই একই লক্ষ্যে, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ সবসময়েই পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ২০১৫ সাল থেকে আমাদের অপারেশনাল গ্রীণ হাউজ গ্যাস নিঃসরণ প্রায় ৭৪% কমিয়ে আনা হয়েছে রিনিউয়েবল ইলেক্ট্রিসিটিতে ট্রানজিশনের মাধ্যমে। এছাড়াও আমাদের বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে যাতে পরিবেশের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেই জন্যেও নেয়া হয়েছে নানান ধরনের উদ্যোগ।

কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চাই নতুন এবং অভিনব সমাধান। বর্তমান সময়ে জনগণ জলবায়ূ পরিবর্তন ইস্যুতে অনেক বেশি সচেতন। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্পোরেশনগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা, সেই বিষয়টি নিয়েও তারা চিন্তিত। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আমরা এমন এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি যা ২০৩০ এর মধ্যে আমাদের কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনেও সাহায্য করবে।

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা

বিগত কয়েক বছরে বিবিধ প্রচেষ্টা ও ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার (ট্রায়াল অ্যান্ড এরর) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি কোন ধরনের উদ্যোগ এনে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায়,নতুন টেকনোলজি এবং ইনোভেশনের প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ষতা ও সহযোগীতার মাধ্যমেই ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

২০২৪ এজিএম-এ ৯৭% শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা সমর্থিত আমাদের ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্রানজিশন প্ল্যানে (সিটিএপি) স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের পরিকল্পনাই রয়েছে। এই পরিকল্পনা একদিকে যেমন স্বল্পমেয়াদে কার্বন ইমিশন কমাতে সাহায্য করবে, ঠিক একইভাবে দীর্ঘমেয়াদে কার্বন ইমিশন কমানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের স্তম্ভগুলোকেও প্রস্তুত করবে। এই পরিকল্পনায় (সায়েন্স বেজড টার্গেট ইনিশিয়েটিভের স্বীকৃতি প্রাপ্ত) আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০৩০ এর মধ্যে জিএইচজি ইমিশন কমানোর পাশাপাশি পুরো ইউনিলিভারকে পরিবেশ সচেতন করার জন্য ১০ টি অ্যাকশন পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে।

কার্বন ইমিশন কীভাবে আমাদের ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠানে প্রভাব ফেলছে, তা ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সিটিএপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সিটিএপির কারণে আমরা বিভিন্ন বিজনেস গ্রুপে সময়োপোযোগী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে আমরা এনার্জি মার্কেটে কম ঝুঁকি নিশ্চিত করতে পেরেছি এবং শস্য ও পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অধিক সুরক্ষা অর্জনে সক্ষম হয়েছি

রেবেকা মারমোট, চিফ সাসটেইনিবিলিটি অফিসার, ইউনিলিভার।

বিনিয়োগে রিটার্নের জন্য দ্রুততম পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের কার্যক্রম দ্রুততর করতে, সিটিএপি-কে ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স মূল্যায়নের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, যা আমাদের মূল স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করবে। এছাড়াও কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নিতে হবে সেগুলোকে আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বাজেট চক্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আমরা প্রতিটি ব্যবসায়িক গ্রুপের সঙ্গে কাজ করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য খরচের রোডম্যাপ তৈরি করেছি। এর ফলে তারা তাদের ফাইন্যান্সিয়াল গ্রোথ প্ল্যানের সাথে সিটিএপির সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তর্ভূক্তি ঘটাতে পারবে। এছাড়াও সিটিএপির প্ল্যানের দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োগ এই বিজনেস গ্রুপ গুলোকে অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে।

আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যবসায়িক উপকারিতা পেয়েছি। ২০০৮ সাল থেকে এনার্জি এফিশিয়েন্ট প্রোগামের মাধ্যমে ইউনিলিভার প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার খরচ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েক বছরে রিজেনারেটিভ কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারের মধ্যে আমরা তৈরি করতে পেরেছি একটি শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন, যা একই সাথে কমিয়েছে আমাদের খরচ এবং কার্বন নিঃসরণ।

কিন্তু এই ধরনের ব্যবসায়িক উপকারিতা বা রিটার্নের জন্য আগাম বিনিয়োগের প্রয়োজন। আগামী তিন বছরে ইউনিলিভার ম্যানুফ্যাকচারিং ডিকার্বোনাইজেশন প্রোগ্রামে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগের মূল লক্ষ্যই হবে আমাদের থার্মাল এবং বৈদ্যুতিক শক্তির ডিকার্বোনাইজেশন, যা বৃদ্ধি করবে আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং কমাবে রেফ্রিজারেশনের ফলে হওয়া অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ। এছাড়াও পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনে ইউনিলিভার ইন্দোনেশিয়ার অলমোকেমিক্যালস ফ্যাসিলিটিতে বিনিয়োগ করছে ৩২৫ মিলিয়ন ডলার, যার ফলে বৈশ্বিক বনায়নের উপর নেতীবাচক প্রভাব ছাড়াই ইউনিলিভারের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পণ্য উৎপাদনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা জলবায়ু এবং প্রকৃতি রক্ষার সাথে সাথে বর্জ্য কমানোর প্রজেক্টে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবো, যার ৩০০ মিলিয়ন ২০২৩ সালের মধ্যেই ব্যয় করা হয়েছে।

আমাদের এডভোকেসিকে আরো সুসংগঠিত ও পদ্ধতিগতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে

আমাদের লক্ষ্য অর্জনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এবং কিছু চ্যালেঞ্জ বৃহত্তর ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন ছাড়া অতিক্রম করা সম্ভব নয়। সিটিএপি-এর আওতায় আমরা আমাদের নির্ভরশীলতার জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করেছি। আমরা চিহ্নিত করেছি কীভাবে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, শিল্প কারখানা এবং ভোক্তাদের সাথে একত্রে কাজ করতে হবে, যাতে এখন, এবং আগামী বছরগুলোতে বাধাগুলি দূর করা যায়, উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা যায় এবং সমাধানগুলোকে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

আমাদের গ্রোথ অ্যাকশন প্ল্যানের (গ্যাপ) প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল সরবরাহকারীদের সাথে সহযোগিতা করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপকে ত্বরান্বিত করা, শিল্প কারখানার সাথে মিলে রাসায়নিক উপাদানের বিকল্প খুঁজে বের করা, বাণিজ্য সংস্থাগুলোর (PDF 1.39 MB) সাথে আমাদের অবস্থান সুসংগত করা এবং সরকারের সাথে একত্রে কাজ করে আমাদের সিটিএপি প্ল্যানের পক্ষে সমর্থন তৈরি করা। এই সকল উদ্যোগ আমাদের নতুন যুগের দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

আমাদের সমন্বিত শক্তিকে আরও জোরালোভাবে ব্যবহার করে আমাদের লক্ষ্যগুলোর দিকে আরো দ্রুত অগ্রসর হতে পারব। কার্বন নিঃসরণকে নেট জিরোতে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিশ্চিত করতে পারবো আমাদের ব্যবসায়িক সাফল্য।

এই উদ্যোগের সাফল্যের জন্য আমাদের সকলের সহযোগীতার প্রয়োজন, যা আমাদের টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রার মূল ভিত্তি, এবং আমি মনে করি এই প্রচেষ্টাকে আমাদের চলমান রাখতে হবে ।

হেইন শুমাখার, সিইও, ইউনিলিভার

জলবায়ু পরিবর্তন সচেতনতায় সিটিএপির ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় ইউনিলিভারের সিইও হেইন শুমাখার এবং চিফ সাসটেইনিবিলিটি অফিসার রেবেকা মারমোট।

Back to top