ইউনিলিভার বাংলাদেশে, আমরা বিশ্বাস করি, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নের জন্য জরুরি পার্টনারশিপ, ইনোভেশন আর বর্তমানের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানে প্র্যাক্টিকাল সল্যুশন খোঁজার প্রত্যয়।
এই প্রেরণা থেকেই আমরা আয়োজন করি “সহযাত্রা: কো-ক্রিয়েটিং ইমপ্যাক্ট” - যা আমাদের পার্টনার, সহকর্মী আর স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়ে আয়োজিত একটি বিশেষ ইভেন্ট। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল একসাথে কাজ করলে কী অর্জন করা সম্ভব, তা সবার সামনে তুলে ধরা। এই ইভেন্টে আমাদের গ্রোথ অ্যাকশন প্ল্যান (গ্যাপ) ২০৩০-এর চারটি পিলার - জলবায়ু, পরিবেশ, প্লাস্টিক আর জীবনমান উন্নয়ন - প্রতিটি ক্ষেত্রেই তুলে ধরা হয়েছে আমাদের পার্টনারদের সাথে নিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার গল্প।
প্লাস্টিক পিলারে আমরা তুলে ধরেছি ইউরিফিলের যাত্রা - একটি ইনোভেশন যা কনজিউমারদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের এক্সপেরিয়েন্সকে নতুন করে কল্পনা করতে সাহায্য করছে। এই স্মার্ট আর সহজে ব্যবহারযোগ্য রিফিল মেশিন প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের উপর নির্ভরতা কমায়, আর নিশ্চিত করে সাশ্রয়।
এই সহযাত্রার উদ্দেশ্য
আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো প্লাস্টিক দূষণ। বিশ্বজুড়ে ৫ বিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমেছে, যার মধ্যে রিসাইকেল করা হয়েছে ১০% এরও কম। বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনগুণ বেড়েছে। শুধু ঢাকাতেই বছরে ব্যক্তি প্রতি তৈরি হচ্ছে গড়ে ২২ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য। অথচ এই বর্জ্যের এক-তৃতীয়াংশেরও কম রিসাইকেল করা হয়; বাকি বর্জ্য জমে থাকে ল্যান্ডফিল, ড্রেন বা জলাশয়ে, যা কমিউনিটি ও ইকোসিস্টেম উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
ইউনিলিভারে, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করে এসেছি, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পণ্য মানুষের নাগালে আনতে প্লাস্টিক সহায়ক হলেও এর জায়গা কখনোই পরিবেশে হওয়া উচিত না। তাই প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের গ্লোবাল ফ্রেমওয়ার্ক - রিডাকশন, সার্কুলেশন ও কোলাবোরেশন-এর মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় কাজ করছি। আমরা আমাদের ভার্জিন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাচ্ছি, প্যাকেজিং ডিজাইন নতুনভাবে ভাবছি এবং রিফিল টেকনোলজির মতো উদ্ভাবনী সমাধানে বিনিয়োগ করছি—যাতে প্লাস্টিককে একটি লুপে রাখা যায়।
বাংলাদেশে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ
ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও ফিলিপাইনের মতো বৈশ্বিক বাজারে রিফিল সল্যুশন সফলভাবে পাইলট করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের রিটেইল ল্যান্ডস্ক্যাপ এদের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন। এখানে ৯৫%–এরও বেশি কনজুমার গুডস বিক্রি হয় দুই মিলিয়নেরও বেশি ছোট, অনানুষ্ঠানিক রিটেইলারদের মাধ্যমে। মানুষ সাধারণত সাশ্রয় ও সহজলভ্যতার কথা মাথায় রেখে খুব অল্প পরিমাণে কেনাকাটা করে।
ফলে গ্লোবাল রিফিল টেকনোলজিগুলোকে বাংলাদেশের বাজারের জন্য নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে। ছোট দোকানে বসানোর জন্য সঠিক সাইজ এবং রিটেইলার ও কনজিউমারদের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা ছিল নতুন ডিজাইনের মূল লক্ষ্য।
ইউরিফিল-এর যাত্রা
এই চ্যালেঞ্জ সমাধান করতে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ২০২২ সালে ট্রান্সফর্ম প্লাটফর্মের আওতায় শুরু করে ইউরিফিল পাইলট প্রকল্প। এই প্রকল্পের পার্টনার হিসেবে আমাদের সাথে ছিল বপইংক - ইনক্লুসিভ বিজনেস ইনোভেশনের জন্য পরিচিত একটি গ্লোবাল সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ। একসাথে আমরা পরীক্ষা করেছি, কীভাবে রিফিল মেশিনগুলো বাংলাদেশের রিটেইল ট্রেড এনভায়রনমেন্টের জন্য উপযোগী করা সম্ভব - যেখানে কনজিউমারদের চাহিদা, যেমন - সাশ্রয়ী, সহজলভ্যতা, সহজে ব্যবহারযোগ্য ও পণ্যের মান নিয়ে আস্থা, এই বিষয়গুলোকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।
ইউরিফিল ব্যবহার করে মানুষের ফিডব্যাক ছিল বেশ আশাজনক। সার্ভেতে দেখা গেছে, ৯৩% কনজিউমার ইউরিফিল পছন্দ করেছেন, আর ৪৩% পরবর্তীতে ইউরিফিল ব্যবহার করেছেন। তারা পছন্দ করেছেন এর সাশ্রয়ী দাম, সহজে রিফিলের সুবিধা আর কম প্লাস্টিক ব্যবহার করেও পণ্যের মান বজায় রাখার গুণ।
পাইলট প্রকল্পের পর ইউরিফিল এখন পরবর্তী ধাপে। অমনি স্ট্র্যাটেজি স্থানীয় পার্টনার হিসেবে আমাদের সাহায্য করছে ব্যবসায়িক মডেল উন্নয়নে, বিস্তৃত পরিসরে মেশিনটি চালু করতে আর ক্ষুদ্র রিটেইল ব্যবসায়ীদের সাথে পার্টনারশিপ গড়তে। এই সম্মিলিত "রিলে রেস" - যেখানে একটি গ্লোবাল আইডিয়া নিয়ে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে তা স্থানীয়ভাবে বাজারে বাস্তবায়ন ও বিস্তৃত করা - প্রমাণ করে কীভাবে ইনোভেশন ও পার্টনারশিপ দ্রুত পরিবর্তন আনতে পারে।

ইমপ্যাক্ট ও সম্ভাবনা
ইউরিফিল এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, কিন্তু এর সম্ভাবনা স্পষ্ট:
- বাংলাদেশের রেটেলের স্পেস ভেবে ডিজাইন করা, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ কেনাকাটা করে।
- স্বল্প আয়ের কনজিউমারদের জন্য সাশ্রয়ী সমাধান।
- নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যেখানে ২৫০টিরও বেশি পদ তৈরি হবে, যার ৮০% নারীদের জন্য।
- মডেলটি বিস্তৃত হলে ১০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর সম্ভাবনা আছে।
- আগামী বছরগুলোতে ১০,০০০ রিটেইলারদের লক্ষ্য করে এই কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা আছে।
আগামী দিনের ভাবনা
ইউরিফিলের যাত্রা ‘সহযাত্রা’-র আসল ভাবনাকেই তুলে ধরে—সীমানা ও ক্ষেত্র পেরিয়ে একসাথে কো-ক্রিয়েশন। গ্লোবাল টেকনোলজি থেকে স্থানীয়ভাবে বাস্তবায়ন করার এই যাত্রা, যা শুরুর ধাপে বপইংকের ইনোভেশন এক্সপার্টিজ থেকে বর্তমানে অমনি স্ট্র্যাটেজির বাজার নিয়ে বিস্তর জ্ঞান কাজে লাগাচ্ছে, একটি ইমপ্যাক্টফুল পার্টনারশিপের ছবি আঁকে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, ইউনিলিভার বাংলাদেশ রিফিল আর রিইউজ মডেলগুলোতে বিনিয়োগ চালিয়ে যাবে, যা সাশ্রয়, বিস্তৃতি ও পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন - এই বিষয়গুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে সবার জীবন প্রতিদিন করবে আলোকিত ও উজ্জ্বল।
