
‘ইনোভেশন অ্যান্ড ইনস্পিরেশন ইন প্যাকেজিং ফর হলিস্টিক প্লাস্টিক সার্কুলারিটি’ এর উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিলিভারের হেড অব প্যাকেজিং এক্সিলেন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ড. কলিন কার, এতে তিনি বিশ্বজুড়ে ইউনিলিভার এর গৃহীত পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং এ ব্যবহৃত উদ্ভাবনগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
এই সেমিনারে দুটি প্যানেল আলোচনাও আয়োজন করা হয়; প্রথমটির শিরোনাম ছিল ‘ইম্পর্টেন্স অব ইনোভেটিভ ডিজাইন ফর প্লাস্টিক সার্কুলারিটি’, এটি পরিচালনা করেন জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশের (ইউএনআইডিও) প্রতিনিধি ডক্টর জাকি উজ জামান। এই প্যানেলের সদস্যরা ছিলেন ইউবিএল এর সাপ্লাই চেইন ডিরেক্টর রুহুল কুদ্দুস খান, বেঙ্গল গ্রুপ এর সিওও আমির দাউদ, প্রিমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিকস এর পরিচালক আনিসুর রহমান, আকিজ-বশির গ্রুপ এর পরিচালক (অপারেশন) এম হোসেন ইরাজ এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল।
দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনা এর শিরোনাম ছিল ‘ইম্পর্টেন্স অব ইনোভেনশন ইন কালেকশন অ্যান্ড রিসাইক্লিং ফর প্লাস্টিক সার্কুলারিটি’, এটি পরিচালনা করেন ইউবিএল এর কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর শামিমা আক্তার, এই প্যানেলে আরো ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সাবেক অধ্যাপক ও ফ্যাকাল্টি ডিন ড. ইজাজ হোসেন, ইউনিলিভারের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইস্যুস ম্যাট ডেমোরাইস, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, বিপিজিএমইএ এর সহ সভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন এবং টেল প্লাস্টিকস, আরএফএল গ্রুপ এর নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল হাসান।
সেমিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান। এছাড়াও বিশেষ অতিথিরা ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এর সম্মানিত চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এর অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সহ সভাপতি মো. আমিন হেলালী।
সেমিনার চলাকালীন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা ‘ইনোভেটিভ ম্যাটেরিয়াল অ্যান্ড প্যাকেজিং’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন, যেখানে ইউবিএল ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্লাস্টিক পণ্য এবং প্যাকেজিং উৎপাদন ও পুনঃচক্রায়ন এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্ভাবনী পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আজকের ‘ইনোভেটিভ ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড প্যাকেজিং’ শীর্ষক প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা নিবিড়ভাবে প্লাস্টিক প্যাকেজিং এ উদ্ভাবন দেখার সুযোগ পেয়েছি। ইউবিএল ও বিপিজিএমইএ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দেশের ব্যবসা খাত সম্পর্কে সরকার অত্যন্ত সচেতন যেহেতু আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য দেশের সার্বিক উন্নয়ন। শুধু প্লাস্টিক দূষণ নয়, সব ধরনের দূষণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান না করে দেশের মানুষকে ভালো জীবন দেয়া সম্ভব নয়। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে শান্তিতে ও স্থিতিশীল পরিবেশে কাজ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্কুলার অর্থনীতির জন্য শিল্পখাতে সমর্থন যুগিয়ে যেতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এর সম্মানিত চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আগের মডেলটি ছিল রৈখিক। অর্থাৎ, কোনো একটি সম্পদ পরিবেশ থেকে গ্রহণ করব, ব্যবহার করব এবং সবশেষে পরিবেশেই ছুঁড়ে ফেলে দেব। তবে এখন সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একটি সার্কুলার মডেল এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আগে আমরা ছিলাম রপ্তানিকারক দেশ, কিন্তু দিন দিন আমরা ভোক্তা রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছি।
ফলে, আজ থেকে ১২ থেকে ১৩ বছর পর আমরা যখন ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশে রূপ নেব, তখন পরিবেশ দূষণ এবং বিশেষভাবে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এ সমস্যার সমাধান না করতে পারলে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। প্লাস্টিক বর্জ্য যখন জলাশয়ে যায়, তখন মাছও সেগুলো খায়। এবং এসব মাছ আমরা খাওয়ার মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং এ থেকে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। নাগরিকদের স্বাস্থ্যরক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্যের সুব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
যাই হোক, প্লাস্টিক দূষণ এর ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা কমিয়ে আনতে পারাই হবে বড় সমাধান। দেশের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে উৎপাদকদের সমন্বয় এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
ইউনিলিভারের হেড অব প্যাকেজিং এক্সিলেন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ড. কলিন কার বলেন, “প্লাস্টিক প্যাকেজিং এ উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য বৈশ্বিকভাবে ইউনিলিভার এর গোল্ডেন প্যাকেজিং রুল এবং ডিজিটাল মডেল এর বাস্তবায়ন করছে। ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেবার বিষয়ে ‘রিজিড’ ও ‘ফ্লেক্সিবল’ উভয় ধরনের প্যাকেজিংই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু একইসাথে সেগুলো পরিবেশে প্লাস্টিক ফুটপ্রিন্ট রাখে, যা সময়োপযোগী কার্যক্রমের মাধ্যমে কমিয়ে আনতে ইউনিলিভার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘লেস, বেটার এবং নো প্লাস্টিক’ কাঠামো অর্জনে আমাদের সামগ্রিক লক্ষ্য প্লাস্টিক প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ডিজাইন নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। প্লাস্টিক প্যাকেজিং কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ইউনিলিভার ইতোমধ্যেই এর নতুন পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়নে সফল হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, লাইফবয় এবং ভিম বার প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৮ এবং ৩০ শতাংশ কম প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ‘বেটার প্লাস্টিক’ ব্যবহার রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমাদের পণ্য প্যাকেজিং এ ফুড-গ্রেড পলিপ্রপিলিন এর সর্বপ্রথম ব্যবহার অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করেছে। প্যাকেজিং এ ব্যবহারের জন্য বিকল্প উপাদানের অনুসন্ধান চালিয়ে যাবার পাশাপাশি রিফিল এবং পুনঃব্যবহার এর মতো কৌশলগুলো আমাদেরকে লক্ষ্যের আরো কাছে নিয়ে যাবে। ইউনিলিভার এর উৎপাদিত প্লাস্টিক এর পুনঃচক্রায়ন একটি বিশাল অর্জন। ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে সম্পৃক্ততার সাথে আমরা প্লাস্টিক প্যাকেজিং উদ্ভাবনের ভ্যালু চেইনে অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে আসতে পারি।”
ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাভেদ আখতার বলেন, “আমাদের সকলেরই পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্লাস্টিক প্যাকেজিং এ উদ্ভাবনী পদ্ধতি এবং একটি বর্জ্যমুক্ত পৃথিবীর প্রতি ইউনিলিভার এর বৈশ্বিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সক্রিয়ভাবে পণ্য প্যাকেজিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উদ্ভাবন প্রয়োগ করছে। উদ্ভাবনী প্যাকেজিং এবং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইউবিএল প্লাস্টিকের বহু সুবিধাকে কাজে লাগাতে চায়। প্লাস্টিক সার্কুলারিটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এখনও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে।
কিন্তু সেগুলো আমাদের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ‘ভিশন ২০৪১’ অর্জনের জন্য সরকার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, প্যানেল সদস্য এবং বিপিজিএমইএ-কে তাদের মূল্যবান চিন্তা-ভাবনা ভাগ করে নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।”
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সহ সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সার্কুলার অর্থনীতি নিয়ে আমাদের ১০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত করতে হবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ যদি টেকসই অর্থনীতি অর্জন করতে চায়, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার জন্য আমাদের একটি ডেটাবেজ দরকার।
প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রভাব দেশে এবং বিদেশে কী অবদান রাখছে সেই সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের প্রয়োজন আছে। এছাড়াও আমাদের স্থানীয় উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজেদের উপস্থিতি তৈরি করতে হবে। এ কারণে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের পরিবর্তনের জন্য সরকারের সমর্থন জরুরি।
বিপিজিএমইএ এর সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, “পণ্যের গুণমান বজায় রাখার জন্য প্লাস্টিকের প্রয়োজনীয়তা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণও জরুরি। শিল্পখাতের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। ফলে বর্জ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই না প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হোক বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্লাস্টিকের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
অতএব, অবকাঠামোগত বিনিয়োগ এবং কৌশলগত সমাধানের উপর জোর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ তাদের সমর্থনের জন্য যা আমাদের সবাইকে একটি সার্কুলার অর্থনীতি অর্জনে সহায়তা করছে।”