গ্র্যান্ড ফিনালেতে যে সকল স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা জুরি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীর্ষ পাঁচ ফাইনালিস্ট টিমকে মূল্যায়ন করেন, তারা হলেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক; ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ জব্বার; এসবিকে টেক ভেঞ্চার্স এর প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবির; ইউবিএল এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার এবং ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মিনহাজ। প্রতিযোগিতার প্রথম রানার আপ হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি)- এর টিম এবং দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) টিম।
‘বিজমায়েস্ট্রোজ’ এর মাধ্যমে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা ইউনিলিভারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সত্যিকারের ব্যবসায়ের কেস স্টাডি সম্পর্কে জানা-বোঝার সুযোগ পায়। এ প্রতিযোগিতার তিনটি চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিযোগিতামূলক পর্বের মধ্যে, প্রথম পর্ব অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সারা দেশ থেকে প্রায় ২০০টি দল অনলাইনে তাদের আবেদন পাঠায়। দ্বিতীয় পর্বে জয়ী হয়ে ১০০ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ৩০টি দল ইউবিএল- এর সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পায়।
আরও দুটি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক রাউন্ডের মধ্য দিয়ে পাঁচ ফাইনালিস্ট টিমকে বাছাই করা হয়েছে। ফাইনাল ইভেন্টে যে পাঁচ টিম অংশগ্রহণ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) এর একটি টিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের (এফবিএস) একটি টিম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) এর দুটি টিম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) একটি টিম।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লিগ (এফএলএল) ২০২৪ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে প্রতিযোগিতায় জয়ী চ্যাম্পিয়ন টিম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশহগ্রহণ করবে।
চলতি বছর বিজমায়েস্ট্রোজ- এর থিম ছিল ‘ইনোভেটিং ফর পিপল অ্যান্ড প্ল্যানেট’, যা স্থায়িত্বের বিষয়টি মনে রেখে অংশগ্রহণকারীদের ইউনিলিভারের নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের জন্য বিজনেস কেইস তৈরির চ্যালেঞ্জ দেয়। কর্মসংস্থান ও শিল্পোদ্যোগের জন্য তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে, বিজমায়েস্ট্রোজ অংশগ্রহণকারীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, মেন্টরশিপ বা পরামর্শ এবং প্রতিযোগিতার বিভিন্ন রাউন্ডের মধ্য দিয়ে শীর্ষস্থানীয় এফএমসিজি ব্র্যান্ডগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। এছাড়া, প্রতিযোগিতার শীর্ষ ৫ টিমের সদস্যরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এ ইন্টার্নশিপ ও ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি প্রোগ্রামের সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক বলেন, “এই বছর বিজমায়েস্ট্রোজ প্রতিযোগিতায় জুরি হিসেবে থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। বাংলাদেশি তরুণদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বের নিরাপত্তায় যে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সে উদ্যোগগুলোতে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাজ্য সরকার।
“জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকার, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাত- সকলকেই সহযোগিতার ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর যেহেতু তরুণদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্যই আমাদের এ লড়াই, তাই এ বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানা জরুরি। বিজমায়েস্ট্রোজ এর মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক নেতৃত্বদের কাছ থেকে অসাধারণ সব আইডিয়া ও আর্থিক পরিকল্পনার ধারণা পেয়েছি। আগামী বছর লন্ডনে আয়োজিত গ্লোবাল রাউন্ডে বিজয়ীদের অংশগ্রহণের জন্য শুভকামনা রইলো।”
এ বছরের ‘বিজমায়েস্ট্রোজ’প্রতিযোগিতা সম্পর্কে ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, “আমাদের ব্যবসায়ের মূলে রয়েছে জনগণ, এবং টেকসই ব্যবসায়ের পথপ্রদর্শক হিসেবে, আমরা তরুণদের আরও ভালো ব্যবসায়িক দক্ষতা অর্জন ও আরও ভালো একটি পৃথিবী বিনির্মাণে দক্ষ করে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কর্মক্ষেত্রের পরিধি পাল্টাচ্ছে, এ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে, নিজেদের মধ্যে উন্নয়ন ঘটাতে এবং শেষ পর্যন্ত একটি নতুন ক্যারিয়ার অথবা কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায় অনুসরণ করতে তরুণদের নিয়ে আমরা কাজ করছি।
“বিজমায়েস্ট্রোজ এমন একটি ফ্ল্যাগশিপ প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক নেতৃত্বের প্রজন্মের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করা হয়। বাংলাদেশে দেড় দশক ধরে এ নেতৃত্ব সমাজে উদ্ভাবন এবং প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বিজমায়েস্ট্রোজ এর জন্য প্রতি বছর ইউনিলিভার আগ্রহভরে অপেক্ষা করে। কেননা এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সারা দেশ থেকে আসা বিপুল সংখ্যক উদ্যমী তরুণদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়ের সুযোগ ঘটে। পুরো বিজমায়েস্ট্রোজ যাত্রার মাধ্যমে, এসব উদ্যমী প্রাণগুলো ব্যবসায়িক বিষয়ে তাদের জ্ঞানকে আরও শাণিত করে এবং এভাবেই তারা বিশ্বের মানুষের ওপর একটি বৃহত্তর প্রভাব তৈরি করে।
“এই বছর, বিজমায়েস্ট্রোজ ফাইনালিস্টরা একটি অসাধারণ কাজ করেছে এবং বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিজনেস কেসগুলোকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করেছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে বিজয়ী টিম ২০২৪ সালে লন্ডনে আবার আমাদের গ্লোবাল স্টেজ দখল করে নেবে এবং বাংলাদেশকে গর্বিত করবে।”
এসবিকে টেক ভেঞ্চার্স এর প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবির বলেন, “বিজমায়েস্ট্রোজ ফাইনালিস্টদের বিজনেস কেসগুলো শুনতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। তাদের কাছে অসাধারণ বিজনেস সল্যুশন্স রয়েছে এবং টিমের প্রত্যেক তরুণ অত্যন্ত উদ্যমী। এছাড়া নিজেদের আইডিয়াগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে রয়েছে। ঠিক কী ধরনের সমস্যার সমাধান তারা করতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা ছিল। অসাধারণ আইডিয়া নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই তারা সফলতার মুখ দেখে। পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো লক্ষ্য থাকলে, তা আসলে ভ্রম বা কল্পনা ছাড়া কিছুই না।”
ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ জব্বার বলেন, “ইউনিলিভার প্রায় দেড় দশক ধরে বিজমায়েস্ট্রোজ এর মতো একটি সুপরিচিত গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মকে সফলভাবে পরিচালনা করে আসছে। স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সমস্যার সমাধানের জন্য এটি একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে সত্যিকারের পেশাজীবনে প্রবেশের আগে তরুণদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়।”