
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইউবিএল) চট্টগ্রামের কালুরঘাট ফ্যাক্টরি ভিজিট করেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশবিষয়ক ট্রেড এনভয় দ্য রাইট অনারেবল ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন ডিবিই, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হার এক্সেলেন্সি সারা কুক এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদল।
ভিজিটের সময় এই ডেলিগেশনকে স্বাগত জানান ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিনিয়র এমপ্লয়ীরা। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, চিফ ফাইন্যান্স অফিসার ও ফাইন্যান্স ডিরেক্টর জিনিয়া হক, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর শামিমা আক্তার এবং কালুরঘাট ফ্যাক্টরির হেড অব ফ্যাক্টরি এস. এম. তারেক সাইফুল্লাহ।
এই সফরে ইউনিলিভারের বাংলাদেশে দীর্ঘ পথচলার সূচনা ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রথম সাবান উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইউনিলিভারের বাংলাদেশে কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়, যা ছয় দশকজুড়ে গড়ে তুলেছে অংশীদারিত্ব, উদ্ভাবন ও আস্থার এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য। বর্তমানে ইউনিলিভারের পণ্য বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ২১টিরও বেশি আইকনিক ব্র্যান্ডের ৯৬%-এর বেশি দেশেই উৎপাদন করা হয়। ১৯৭৩ সাল থেকে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ৩৯.২৫% শেয়ারের মালিকানা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের, যা সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের এক অনন্য ও সফল দৃষ্টান্ত।
কর্ণফুলী নদীর তীরে ১৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা ইউনিলিভারের কালুরঘাট ফ্যাক্টরীটি উদ্ভাবন ও দৃঢ়তার প্রতীক। ২০১৪ সাল থেকে ফ্যাক্টরীটি “জিরো ওয়েস্ট টু ল্যান্ডফিল” রেকর্ড ধরে রেখেছে এবং ২০২১ সালে অর্জন করেছে ১০০% রিনিউএবল এনারজির সার্টিফিকেশন। প্রক্রিয়াগত উন্নয়নের মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে ফ্যাক্টরীটি সাশ্রয় করেছে ২৪০ কোটি লিটার পানি, যা ইউনিলিভারের টেকসই উৎপাদন ও দায়িত্বশীল প্রবৃদ্ধির প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
ভিজিটের সময় ডেলিগেশন ফ্যাক্টরীর উৎপাদন লাইন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে দেখেন এবং ফ্যাক্টরীর এমপ্লয়ীদের সাথে টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। ফ্যাক্টরীর প্রধান এস. এম. তারেক সাইফুল্লাহ তাদের বিভিন্ন ইউনিটের ফাংশন সম্পর্কে জানান এবং কেজিএফকে একটি আধুনিক, ফিউচার-ফিট উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরের যাত্রা তুলে ধরেন। ভিজিট শেষে ডেলিগেশনটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে একটি সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যতের প্রতি তাঁদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
হার এক্সেলেন্সি ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন ডিবিই বলেন, “ইউনিলিভারের কালুরঘাট ফ্যাক্টরী ভিজিট আমার জন্য একটি সমৃদ্ধ ও অনুপ্রেরণাদায়ী অভিজ্ঞতা। এমপ্লয়ীদের সবার আন্তরিকতা, উদ্যম আর ইতিবাচক মনোভাব সত্যিই প্রশংসনীয়। দেশের মানুষের জন্য মানসম্মত পণ্য তৈরি করতে ইউনিলিভারের টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধ করেছে। ব্রিটিশ ঐতিহ্যের একটি প্রতিষ্ঠান যেভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে, তা দুই দেশের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হার এক্সেলেন্সি সারাহ কুক বলেন, “বাংলাদেশের ইনক্লুসিভ ও গ্রীন ইকোনমির যাত্রা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। ইউনিলিভারের মতো দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ করা ও স্থানীয়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। টেকসই উন্নয়ন ও জীবিকার স্থিতিশীলতায় তাদের বিনিয়োগ সেই দূরদর্শী নেতৃত্বেরই নিদর্শন, যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার জন্য প্রয়োজন।”
ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, “ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে কালুরঘাট ফ্যাক্টরি ইউনিলিভার বাংলাদেশের উন্নয়ন, উদ্ভাবন আর পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। সাবান তৈরির এক ছোট উদ্যোগ থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক অটোমেশন ও টেকসই উৎপাদনের এই যাত্রা আমাদের দেশের শিল্প বিকাশের ইতিহাসকেও তুলে ধরে। আমরা গর্বিত যে, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশবিষয়ক ট্রেড এনভয় ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন ডিবিই এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে আমাদের ফ্যাক্টরি ভিজিট করেছেন। তাঁদের সুচিন্তিত মন্তব্য ও উৎসাহ শিল্পের উৎকর্ষ ও টেকসই অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।”
এই ভিজিটে ইউনিলিভারের ভবিষ্যৎ-উপযোগী টেকসই উন্নয়ন যাত্রার বিভিন্ন উদ্যোগগুলোও তুলে ধরা হয়, যা জলবায়ু সহনশীলতা, প্লাস্টিক হ্রাস, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং কমিউনিটি ক্ষমতায়নের মতো নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত। উদ্ভাবনকে কেন্দ্রে রেখে ইউনিলিভার বাংলাদেশ জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে নিজেদের ব্যবসায়িক কৌশল সমন্বয় করে কাজ করছে, যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক কল্যাণ একসাথে অগ্রসর হয়।