Skip to content

সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি

Collage picture of the key moments of the event at CRP

সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে তোলে। আমাদের সমাজের সব পর্যায়ে এখনও অসমতা রয়েছে, কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি যেহেতু ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে পারে। বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্ত কর্মীরা যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, সুনাম, উদ্ভাবনী চিন্তা আর কর্ম-পরিবেশকে প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করে। একই সাথে এই সকল কর্মীরা প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তাদের আরও কাছে নিয়ে যায়।

সমাজে সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করতে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) নিজেদের সামর্থ্য আর সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্র, ব্র্যান্ড, সাপ্লাই চেইন বা সমাজে আমাদের কার্যক্রম পরিচলনা করার ক্ষেত্রে সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখতে চাই। এই উদ্দেশ্যে আমরা সমতা প্রতিষ্ঠা করতে এবং বৈচিত্র্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে সকল কর্মীদের সক্ষমতা, সচেতনতা আর সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছি। আমদের কার্যক্রমগুলো আমাদের বৈশ্বিক কম্পাস আর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আমরা সমাজের সকল মানুষের সমান অধিকার, সুযোগ ও সমতায় বিশ্বাস করি। তাই, আমাদের ব্যবসা এবং জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে আমরা একটি সমতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতিবাচক অবদান রাখতে কাজ করছি।

অসমতা প্রতিরোধ এবং ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছিঃ

  • পক্ষপাতশূন্য, বৈষম্যহীন এবং ভারসাম্যপূর্ণ একটি সমাজ গঠন
  • নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে বৈচিত্র্য নিশ্চিতকরণ
  • ২০২৫ এর মধ্যে আমাদের কর্মশক্তির ৫% বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের দ্বারা গঠিত হবে
  • বিজ্ঞাপণগুলোতে সামাজিক বৈচিত্র্যের প্রদর্শনী বৃদ্ধি

ক্ষমতায়ন আর অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথ-প্রদর্শক

আমরা এমন একটি সুন্দর, উন্নত সমাজের স্বপ্ন দেখি যেখানে সবাই সম্মান ও সমতার সাথে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বিকশিত হবে, যেখানে সবার নিজস্বতা, বৈচিত্র্য ও অনন্যতাকে সম্মান ও স্বীকৃতি দেয়া হবে। যেহেতু আমরা বিউটি এন্ড ওয়েলবিয়িং, পারসোনাল কেয়ার, হোম কেয়ার ও নিউট্রিশন ক্যাটেগরিতে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করি এবং আমাদের অর্ধেক ভোক্তা বা ব্যবহারকারী হচ্ছেন নারী, তাই আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমাদের ব্যবসার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আমাদের কার্যক্রমে নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারলে আমরা আরও ভালোভাবে আমাদের নারী ভোক্তাদের পছন্দ ও তাদের চাহিদা সম্পর্কে জানতে পারব এবং ভোক্তাদের আরও কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব। কর্মক্ষেত্রে সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারলে তা যে কোনো ব্যবসায় কর্মদক্ষতা, উদ্ভাবনী ও সহযোগিতামূলক মনোভাব, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে ভূমিকা রাখবে।

ইউবিএল এ আমরা শুধু সংখ্যার হিসেবে নয়, বরং সামগ্রিক ভাবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সকলের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বেই কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিয়ে নেতিবাচক সামাজিক নিয়ম, বৈষম্য ও বাধ্যবাধকতা আছে, যেমন নারীদের পক্ষে রাতের শিফটে কিংবা মাঠপর্যায়ে বিক্রয়ের কাজ করা কঠিন। এই নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা এবং পরিবর্তন করা আমাদের ব্যবসায়িক স্ট্যাটেজির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইউবিএল-এর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি, কর্মপরিবেশ ও নেতৃত্ব বিকাশে সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তিকে আমরা আমাদের স্ট্যাটেজির গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসাবে বিবেচনা করি।

কোনো নারীই যেন পিছিয়ে না থাকে- এই উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে আমাদের ভ্যালূ চেইন এবং সমাজের সকল পর্যায়ে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও কার্যক্রম জেন্ডার- লেন্স বা লিঙ্গ সমতা-আঙ্গিকে ধাবিত করছি। আমরা আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম, প্রভাব, ও অংশীদারিত্বে পরিবর্তন এনে নারীদের অধিকার, দক্ষতা তৈরী ও কাজের সুযোগ তৈরী করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করছি। আর এভাবেই আমাদের ভ্যালূচেইনসহ অনান্য ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং সমতা প্রতিষ্ঠায় আমরা সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করছি। আমাদের পদক্ষেপগুলো হলোঃ

আমাদের ব্যবসাঃ কর্মক্ষেত্র এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি তৈরী

আমাদের সাপ্লাই চেইনঃ আমাদের সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্রের ইতিবাচক উপস্থাপন

আমাদের ব্র্যান্ডঃ আমাদের ব্র্যান্ড এবং পণ্যের অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তন

আমাদের অংশীদারীত্বঃ নারীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে এবং বৃহত্তর সমাজে ক্ষমতায়ন ও সমতা নিশ্চিত করতে আমাদের অংশীদার আর সমমনাদের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করা

সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার পথে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে জেন্ডার ব্যালেন্স বা লিঙ্গবৈষম্যের অবসান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে। আমরা অনুধাবন করেছি যে সমাজের পরিবর্তন তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা সবার আগে নিজেদের সঠিকভাবে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবো। তাই আমাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা আমাদের নিজেদের কর্মক্ষেত্র এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের কাজ শুরু করেছি।

কর্মী নির্বাচন, নিয়োগ, মেধা বিকাশ, প্রশিক্ষণ, কর্মপরিবেশ-সহ আমাদের মানবসম্পদ বা ব্যবসায়িক সকল নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা নারী-পুরুষের সমতা ও সমঅধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ফলাফল হিসেবে ২০২২ সালের শেষে আমাদের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নারী ব্যবস্থাপকদের হার ৫০% তে উন্নীত হয়, ২০১৬ সালে যে হার ছিল মাত্র ১০%। ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে সামগ্রিকভাবে ৫০:৫০ নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছি। বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নেতৃিস্থানীয় ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের হার বিবেচনা করলে আমাদের সমতার হার সবচেয়ে বেশি।

মাঠ-পর্যায় থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে আমরা নিশ্চিত করেছি নারী পুরুষের জন্য সমান সুযোগ।

উদাহরণস্বরূপ, মাঠপর্যায়ে দোকানে-দোকানে গিয়ে পণ্যের অর্ডার গ্রহণের কাজ করা বিক্রয় প্রতিনিধির দায়িত্ব সাধারণত পুরুষেরা পালন করে থাকেন। তাই, অনেকের ধারণা রয়েছে যে মাঠপর্যায়ে এই ধরণের কাজে নারীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বা তাদের পক্ষে এই কাজ করা কঠিন।

মানুষের এই ভুল ধারণা দূর করতে, আমরা মাঠপর্যায়ে নারী বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ করেছি। কাজের ক্ষেত্রে তাদের জন্য সকল জ্ঞান লাভ ও দক্ষতা অর্জনের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তাদের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেক নারী পরবর্তীতে আমদের সাথে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।

একইভাবে আমাদের প্রথম ও ঐতিহ্যবাহী কারখানা কালুরঘাট ফ্যাক্টরি (কেজিএফ)-তে ব্যবস্থাপনা কিংবা ফ্লোর পরিচালনায় নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম ছিলো। আমরা কেজিএফ-কে নারী বান্ধব করার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ে কাজ করা শুরু করি এবং নতুন নীতির প্রয়োগ ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণের মাধ্যমে উৎপাদন পর্যায়ে নারী কর্মীদের অধিক হারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি। ফলস্বরূপ, বর্তমানে কেজিএফ-এ ২২৬ জন নারীকর্মী সরাসরি উৎপাদন ও বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কাজ করছেন।

আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে নারী পুরুষের সমতা অর্জন সম্ভব হয়েছে বেশ কিছু নীতি প্রণয়ন এবং সেগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে। যোগ্য ও মেধাবী নারীদের নিয়োগ প্রোগ্রাম, উদ্বুদ্ধ ও ধরে রাখা, এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করে নিশ্চিত করেছি শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বসহ সকলের প্রচেষ্টা আর অংশগ্রহণ।

এই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে আমরা কিছু উল্লেখযোগ্য নীতি এবং উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উদাহরণস্বরূপ, নারী কর্মীদের জন্য আমাদের অনেক মাঠ পর্যায়ের অফিসে পৃথক টয়লেট ছিল না। এই সমস্যা সমাধানে আমরা সামাজকল্যাণমূলক স্টার্টআপ "ভূমিজ" এর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশব্যাপি আমাদের ফিল্ড অফিসগুলোতে নারীদের ব্যবহার উপযোগী ৪৩টি আধুনিক ওয়াশ ফ্যাসিলিটি প্রস্তুত করেছি।

যৌন হয়রানি (প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারেসম্যান্ট) এবং গৃহস্থালির নির্যাতন প্রতিরোধ করতে আমরা নীতি প্রণয়ন করেছি যেন আমাদের কোনো কর্মী এ জাতীয় হয়রানির শিকার হলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। আমাদের নীতি অনুসারে আমরা আমাদের কর্মীদের শিশু ও বয়স্কদের সেবায় এবং মাতৃত্বকালীন শুশ্রূষার জন্য কেয়ারগিভার বা পেশাদার সেবাদানকারীর ব্যবস্থা করে থাকি।

সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি রক্ষায় প্রতিষ্ঠানের সকলের অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা নিশ্চিতকরণের জন্য আমরা আমাদের নারী এবং পুরুষ শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়ে ডিএন্ডআই কাউন্সিল গঠন করেছি এবং এই কাউন্সিল থেকে আমরা বেশ কিছু অভিনব উদ্যোগ নিয়েছি। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের মতো সমচিন্তার ৮টি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা ইন্সপিরিট গঠন করেছি যা বাংলাদেশী নারীদের কর্মক্ষেত্রে সমতার জন্য কাজ করছে। ইন্সপিরিট বিক্রয় বিভাগে কাজ করা নারীদের নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে।

এছাড়াও আমাদের আরও একটি উদ্যোগ স্ট্রাইড, যার মাধ্যমে আমারা নারী-পুরুষ ভেদে সকলকে দীর্ঘ কর্মবিরতীর পরও কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসতে সাহায্য করছি। আমাদের শি-ফর-শি একটি কার্যক্রম যেখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নারীরা একসাথে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও পরস্পরকে সহায়তা করে থাকেন।

অনেক বছর ধরেই আমরা স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) বিষয়ক কাজে নারীদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি। ২০২২ সাল থেকে আমাদের সাপ্লাই চেইন এবং রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মীদের ৩৩% এর বেশি কর্মী নারী, যা ২০২৫ সালের মধ্যে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করি।

স্টেম বিষয়ক ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে কাজ করি অভ্যন্তরীণভাবেও আমরা শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে আলোচনা এবং অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দের সাথে ব্যক্তিগত সেশনের আয়োজন করেছি যেন এইসব বিভাগে কাজ করা নবীন এবং মধ্যম পর্যায়ের মেধাবী কর্মীরা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পান এবং তারা কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারেন। আমাদের কারখানাগুলোতেও নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রতিনিয়ত তাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিনিয়োগ করে চলেছি। স্টেম এর বিভিন্ন খাতে নারীদের আরও বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতের জন্য আরও দক্ষ, আরও প্রস্তুত এক কর্মশক্তি গড়ে তুলছি।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য সমতা আর অন্তর্ভুক্তি

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউএইচও) এর মতে, বিশ্বের প্রতি ৬ জনের ১ জন কোনো না কোনো সীমাবদ্ধতা নিয়ে বসবাস করছে। প্রতিবন্ধিতার কারণে এই সকল মানুষেরা শিক্ষা লাভ, পারিবারিক সহায়তা, চাকরী-সহ সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের ক্ষমতায়নে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। ইউবিএল সামাজিকভাবে ক্ষমতাহীন ও বিচ্যুতির অংশ এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সকল মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও সুযোগ সৃষ্টিতে বদ্ধপরিকর। আমরা বিশ্বাস করি সকলের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন সকলের সমান সুযোগ তাই আমরা এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের কাঠামোবদ্ধভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের জন্য সমতা নিশ্চিত করেছি।

ইউবিএল-এ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের অফিসসহ সকল অবকাঠামোগুলো এমনভাবে নির্মাণ করেছি যেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষেরা এই অবকাঠামোগুলো ব্যবহার করতে কোন সমস্যার সম্মুখীন না হয়। একইভাবে আমরা আমাদের কাজের প্রক্রিয়া, আমাদের নিয়োগের নীতি ও দক্ষতাবৃদ্ধি প্রশিক্ষণগুলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের কথা বিবেচনা করে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করেছি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম থেকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত করি যেন আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, সকল ফ্যাসিলিটি ও ওয়েব প্ল্যাটফর্ম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ডিজাইন করা হয়।

ইউনিলিভার বাংলাদেশে আমরা শুধু নারী-পুরুষ বা জেন্ডার অন্তর্ভুক্তির নিশ্চিত করি না বরং আমরা সমতার পরবর্তী ধাপ, তৃতীয় লিঙ্গ এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের আমাদের মধ্যে স্বাগত জানাই।

এই অন্তভুক্তির সংস্কৃতি ও কর্মপরিবেশ অর্জনের জন্য, আমরা আমাদের কর্মীদের মাঝে সচেতনতা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। প্রতিটি বিভাগের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা আমাদের কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে জানিয়েছি এবং এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য তাদের সক্ষম ও প্রস্তুত করেছি। পাশাপাশি আমরা আমাদের কর্মীদের এই ধরণের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের ও বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানাতে এবং আমাদের কার্যক্রম ও সমাজের মূলধারায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে অনুপ্রাণিত করেছি। এছাড়াও আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকল ফ্যাসিলিটিতে সকলের জন্য উপযোগী ওয়াশরুম, আপদকালীন ইভ্যাকুয়েশন চেয়ার এবং হুইলচেয়ার র‍্যাম্প নিশ্চিত করেছি।

একইসাথে আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কোন দিকে মনোযোগ দিতে হবে তা খুঁজে বের করতে স্কিল-গ্যাপ বিশ্লেষণ করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা সব ধরণের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য রোল ম্যাপিং ও স্কিল প্রোফাইল তৈরি করতে কাজ করছি। এই কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের বিভিন্ন অংশীজন যেমন এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) এর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছি।

পরিবর্তনের জন্য একসাথে

রিন নামকরা নারী

একজন নারীর জন্য নাম, পরিচয় কিংবা পরিচিতি কী? তাদের জন্য এটি হচ্ছে অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা পার হবার বিশেষ শক্তি। কিন্ত একটি লম্বা সময় ধরেই অনেক নারীরা তাদের এই আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত, যার কারণে তারা তাদের সম্ভবনা আর সক্ষমতা অনুসারে সামনে এগিয়ে যেতে পারছেন না।

একজন নারী তার নিজের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে একেক পরিচয়ে পরিচিত হন। কৈশোরে কারো মেয়ে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কারো বোন বা স্ত্রী, জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে কারো মা। জীবনের এই নানান পরিচয় এবং সম্পর্কের মধ্যে যে পরিচয় নিয়ে তিনি জন্মেছেন তা হারিয়ে যায়।

তাই নিজের নাম ও পরিচয়ে পরিচিত হতে, বাংলাদেশের এক নম্বর ফেব্রিক ক্লিনিং ব্র্যান্ড রিন ২০২২ সালে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘রিন নামকরা নারী’ কার্যক্রম শুরু করে। সকল কর্মদক্ষতা সম্পন্ন নারীদের পরিচয় এখানে তুলে ধরা হয়েছে। দেশজুড়ে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে রিন চেষ্টা করছে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা মেধাবী নারীদের গল্প তুলে ধরতে যেন নারীরা নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারে।

রিন যেমন কাপড়কে উজ্জ্বল রাখে, তেমনি চায় নারীরাও যেন নিজের নাম নিয়ে সেভাবেই উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেন। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার নারী এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।

এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। আমাদের পণ্যের প্যাকেজিং থেকে শুরু করে সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিজ্ঞাপন সবকিছুর মাধ্যমে আমরা মহীয়সী এই নারীদের অর্জন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। রিন নামকরা নারী ইতোমধ্যে গ্র্যান্ড প্রিক্স, ৩টি ডিজিটাল মার্কেটিং এওয়ার্ডস, ৪টি কমওয়ার্ডসসহ একটি গোল্ড ইন গোয়াফেস্ট পদক অর্জন করেছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় মিডিয়া পুরস্কার।

অন্তর্ভুক্তির বাতিঘর

আমরা সমঅধিকার, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈচিত্র্যের নীতি অনুসরণ করে একটি কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ, যা আমাদের ভোক্তাশ্রেণীর সামাজিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। বলিষ্ঠ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের অধীনে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড শুধু নিজের কর্মক্ষেত্রেই সমতা, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে কাজ করছে না, বরং আমাদের ভ্যালু চেইন, অংশীদার প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি সামগ্রিক সমাজের সমতা, বৈচিত্র্য আর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি টেকসই এবং বসবাসযোগ্য আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছে।

Back to top