হালকা এবং সাশ্রয়ী প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে প্লাস্টিক ভোক্তাদের পণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের ভোক্তাদের ক্ষেত্রে। তবে, একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য প্লাস্টিককে একটি চক্রাকার প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা প্রয়োজন। প্লাস্টিক একটি সম্পূর্ণ রিসাইক্লেবল উপাদান, তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার নয়, বরং, প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের একটি সহযোগিতামূলক পদ্ধতির প্রয়োজন। এ কারণেই আমরা একটি পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে কাজ করে যাচ্ছি যেন প্লাস্টিকের জন্য একটি সার্কুলার ইকোনমি প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
UBL Sustainability Report 2021 (PDF 66.61 MB)
আমাদের অঙ্গীকার
- ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০% ভার্জিন প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস
- ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫% রিসাইকেল করা প্লাস্টিকের ব্যবহার
- ২০২৫ সালের মধ্যে বিক্রিত প্লাস্টিক প্যাকেজিং-এর তুলনায় অধিক পরিমাণে প্লাস্টিক সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ
- ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০% রিইউজেবল, রিসাইকেবল ও কম্পোস্টেবল প্লাস্টিক প্যাকেজিং-এর ব্যবহার
- ফ্যাক্টরির কোন বর্জ্য মাটি ভরাট বা ল্যান্ডফিল না করার নীতি বজায় রাখা
প্লাস্টিক প্যাকেজিং এর পুনর্মূল্যায়ন
প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পৃথিবী ও এর জনজীবনের জন্য কতটা ভয়াবহ প্রভাব সৃষ্টি করছে- এ বিষয়ে আমরা সচেতন। বৈশ্বিক ভাবে একতাবদ্ধ হয়ে অতি দ্রুত প্লাস্টিক দূষণের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে উন্নত ভবিষ্যতের জন্য টেকসই সমাধানের প্রতি জোর দেয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
কম প্লাস্টিক, উন্নত প্লাস্টিক এবং কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার না করার এই ৩টি নীতির মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস করছি এবং একটি চক্রাকার মডেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দ্রুত কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখছি।
নিচের ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণের মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিঃ
কম প্লাস্টিকঃ কম ওজনের প্লাস্টিক, পুনরায় ব্যবহার্য ও রিফিল ফরম্যাট ও কম প্যাকেজিং যুক্ত কনসেন্ট্রেটেড পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রথম ধাপেই কমিয়ে আনছি।
উন্নত প্লাস্টিকঃ আমাদের পণ্যের প্যাকেজিং এ ব্যবহৃত প্লাস্টিক যেন অবশ্যই রিসাইকেল সক্ষম হয় এবং সম্ভব হলে রিসাইকেল করা প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, তা নিশ্চিত করা।
প্লাস্টিক-মুক্তঃ নতুন প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে পরিহার করার জন্য নতুন ফরম্যাট ও রিফিল স্টেশন ব্যবহার এবং কাগজ, গ্লাস বা অ্যালুমিনিয়ামের মতো বিকল্প প্যাকেজিং ব্যবহার করা।
প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সেগ্রিগেশন এবং রিসাইকেল করার সম্পূর্ণ ভ্যালু চেইনের সকল স্তরের অংশীদারদের ক্ষমতায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। বর্জ্যকে একটি উপযোগী সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে, আমরা প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে চাই।
ইউবিএল-এ আমরা বিশ্বের সার্বিক সুস্থতাকে আমাদের সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করে একটি বর্জ্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই, যা আমাদের কম্পাস কৌশলে প্রতিফলিত। আমাদের এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আদর্শ প্রক্রিয়া ৩ আর - রিডিউস, রিইউজ ও রিসাইকেল- এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণমুক্ত বাংলাদেশ - আমাদের পদক্ষেপ
একটি বর্জ্য-মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি রয়েছে। তাই আমরা এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রগামী পরিবর্তন আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং ৩টি প্রগতিশীল ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে আমাদের ভূমিকা পালন করছি।
টেকসই ম্যানুফ্যাকচারিং পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়ার বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশে টেকসই ম্যানুফ্যাকচারিং পদ্ধতির অগ্রদূত হিসেবে আমরা আমাদের উৎপাদন কেন্দ্র থেকে জিরো ল্যান্ডফিল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও অগ্রগামী পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০১৪ সাল থেকে নিশ্চিত করেছি যে, আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ার কোন বর্জ্য ল্যান্ডফিল এ যায় না। আমাদের উৎপাদন কেন্দ্রের সকল বর্জ্য রিইউজ, রিসাইকেল অথবা কো-প্রোসেস করা হয়। আমরা গর্ববোধ করি যে বাংলাদেশের যে সকল প্রতিষ্ঠান এফ্লুএন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টের (ইটিপি) বর্জ্যসহ তাদের সকল শিল্পবর্জ্য জিরো ল্যান্ডফিল নিশ্চিত করতে কো-প্রসেসিং ফ্যাসিলিটিতে পাঠায়, তাদের মধ্যে আমরাও আছি।
আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে সৃষ্টি হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে আমরা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত করে যাচ্ছি, যা নিশ্চিত করছে, আমাদের উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে সৃষ্টি হওয়া কোনো বর্জ্য পরিবেশ দূষণের কারণ হচ্ছে না।
আমাদের উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জিরো লিক্যুইড ডিসচার্জ এবং অর্গানিক ওয়েস্ট রিসাইক্লিং এর লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তিতে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে চলেছি।
২০১৪ সাল থেকে আমরা আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে প্রায় ৭৩,১৯০ টন কার্বন ডাইওক্সাইড পরিবেশে ছড়ানো রোধ করতে পেরেছি।
২০১৮ সাল থেকে আমরা ১৭৩১ টন এনার্জি প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে রিকভার করতে সক্ষম হয়েছি।
উদ্ভাবনী ডিজাইনের মাধ্যমে প্লাস্টিক প্যাকেজিং এ পরিবর্তন
গবেষণা, ভোক্তাদের চাহিদা বিশ্লেষণ, এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের প্যাকেজিং- এ প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস করতে আমরা প্যাকেজিং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করছি। বাংলাদেশে আমাদের ডিজাইন উদ্ভাবনের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে আমরা আমাদের পণ্যগুলিতে ১১৭৪ টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস করেছি, যা আমাদের মোট ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ১২.৮%।
আমাদের নতুন ১ লিটার ভিম এর বোতলে এখন ৩৩% কম প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, নতুন লাইফবয় হ্যান্ড ওয়াশ বোতলে ১৮% কম প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় এবং গ্লো এন্ড লাভলি ক্রিম এর টিউবের ভেতর থেকে সিংহভাগ ফয়েল সরাতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের ব্যবহার নিয়ে আচরণগত পরিবর্তন আনতে আমরা সুপারশপ এবং হাইপারমার্কেটে রিফিল স্টেশন নিয়ে এসেছি। একই সাথে, সীমিত আয় এবং পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক রিফিল প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে আমরা শহুরের মুদি দোকানগুলোর জন্য একটি রিফিল মেশিন ডিজাইন করেছি। বর্তমানে শহরের কিছু দোকানে রিফিল মেশিনের সক্ষমতা পরীক্ষা চলছে।
ভ্যালু চেইনে ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যের সার্কুলার ইকোনমি প্রতিষ্ঠা
হালকা ও সুলভ উপাদান হিসেবে প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রতিস্থাপন করা কঠিন। রিসাইকেল করার জন্য ভোক্তাদের ব্যবহার করা প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রিসাইকেল মূল্য কম হওয়ার কারণে শক্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের তুলনায় নমনীয় বা পাতলা প্লাস্টিক সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃতভাবে আরও বেশি কঠিন।
বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, নতুন ব্যবসায়িক মডেল ও প্লাস্টিক বর্জ্যের সার্কুলার ইকোনমি তৈরি। স্মার্ট এবং পরিমিত উপায়ে একটি সিস্টেম তৈরিতে বিশ্বে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে যেন প্লাস্টিককে একটি লুপ-এ রেখে ও পরিবেশের ক্ষতি না করে ব্যবহার করা যায়।
আমাদের এই পদক্ষেপের ৩টি ধাপঃ
মূল্যায়নঃ স্টেকহোল্ডার এবং সহযোগীদের সাথে কাজ করে, আমরা প্রথমে গভীরভাবে পরিস্থিতি নিরীক্ষা এবং স্টেকহোল্ডার ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করি যেন সিস্টেমের মধ্যে থাকা বাধাগুলো চিহ্নিত করা যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো সনাক্ত করা যায়, যার সমাধান করা প্রয়োজন৷
সহযোগিতাঃ ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের সহযোগিতায় বর্তমান অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার পূর্ণ সক্ষমতা ও দক্ষতা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব। আমরা অংশীদারদের সহযোগিতায় সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা এবং বর্জ্য সংগ্রহকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে কাজ করি।
ইন্টারভেনশনঃ দীর্ঘ-মেয়াদে প্লাস্টিক সার্কুলারিটি অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাস্তবায়নযোগ্য, স্মার্ট, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সর্বব্যাপী একটি মডেল আমরা ডিজাইন করেছি। নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং তথ্যভিত্তিক নিরীক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের কার্যক্রমের পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে থাকি।
টেকসই ভবিষ্যতের জন্য প্লাস্টিক দূষণমুক্ত শহর
বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল, উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য, বিশেষভাবে স্বল্প আয়ের ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করতে হালকা এবং সুলভ পণ্য হিসেবে প্লাস্টিকের চাহিদা রয়েছে। তাই, টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের নিশ্চিত করতে হবে প্লাস্টিক যেন কোনো ভাবেই পরিবেশে ফিরে গিয়ে দূষণ সৃষ্টি করতে না পারে।
বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভ্যালু চেইন অআনুষ্ঠানিক অবকাঠামোর উপর নিরভরশীল এবং বর্জ্য সংগ্রহেরও সার্বজনীন নীতিমালা অবর্তমান। এমনকি দেশের বড় শহরগুলোতেও প্লাস্টিকসহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহের পর্যাপ্ত কাঠামোবদ্ধ ব্যবস্থা নেই। তারপরেও, বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে সংগৃহীত মোট প্লাস্টিকের ৪০% রিসাইকেল করা হয়। রিসাইকেল প্রক্রিয়া সহজতর করা প্লাস্টিককে চক্রাকার প্রক্রিয়ায় রাখার একটি স্মার্ট উপায় এবং প্লাস্টিককে চক্রাকার প্রক্রিয়ায় অবদ্ধ রাখাই আমাদের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য।
সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের অগ্রদূত হিসেবে আমরা নগর কর্তৃপক্ষদের সাথে কাজ করে তাদের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করতে শুরু করেছি। প্লাস্টিক বর্জ্য ভ্যালু চেইন ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করতে আমরা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পৌরসভা-সমর্থিত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু করেছি।
আমরা অনুধাবন করি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এমন একটি বড় সমস্যা যা আমাদের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। অ্যাডভোকেসির পাশাপাশি এর জন্য প্রয়োজন মাঠ-পর্যায় থেকে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে প্লাস্টিকের জন্য চক্রাকার পদ্ধতি তৈরী করা। বিশেষত প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ এবং মাঠ পর্যায়ে প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে। আমাদের প্রথম পাইলট প্রকল্প আমরা নারায়ণগঞ্জে শুরু করি এবং পরে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে তা বর্ধিত করা হয়।
ইউএনডিপি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) এর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালে ৪টি ভিন্ন মডেল অনুসরণ করে নারায়ণগঞ্জে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের পাইলট প্রক্রিয়া চালু করি। একইসাথে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাতিক্রমী ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি তৈরী করতে আমরা দুটি স্টার্টআপের সাথে কাজ শুরু করি।
কাঠামোগত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর তৈরী করতে ২৪ মাস ব্যাপী আমরা এনসিসি এবং জনমানুষের সাথে পাইলট প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছি যা থেকে আমরা শিখেছি কীভাবে লোকাল ভ্যালু চেইন কাজ করে এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্য ও মাল্টি-স্টেকহোল্ডার পন্থা অবলম্বনের উপায়। মাঠ-পর্যায় থেকে বাস্তব পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা আমাদের জন্য প্রয়োজন ছিল কারণ আমরা বিদ্যমান বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইকেল ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে চেয়েছি।
হালকা এবং নমনীয় প্লাস্টিকের বিনিময় মূল্য অনেক কম হওয়ার কারণে এবং সংগ্রহের কাজ সহজ না হওয়ার কারণে এই ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা বর্জ্য সংগ্রহকারীদের জন্য লাভজনক নয়। তাই বিদ্যমান ভ্যালু চেইনের কর্মী যেমন বর্জ্য সংগ্রহকারী, ও বর্জ্য ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ ও জীবনযাত্রায় ভূমিকা রেখে আমরা হালকা ও নমনীয় প্লাস্টিক সংগ্রহ ও রিসাইকেল প্রক্রিয়াকে সহজতর করার চেষ্টা করেছি। আমাদের পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা নারারণগঞ্জে ৩০০০ টনের বেশি ফ্লেক্সিবল প্লাস্টিক সংগ্রহ করার পাশাপাশি ৬০০,০০০ এর বেশি ভোক্তাদের কাছে অভ্যাস পরিবর্তন করার জন্য় সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি এবং ২০০০ এর বেশি বর্জ্য সংগ্রহকারীদের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পেরেছি।
আমাদের এই পাইলট কার্যক্রম থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা চট্টগ্রামে আরও বড় পরিসরে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপানার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করি। এই উদ্যোগে আমাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন (ইপসা)। ইপসা চট্টগ্রামের বৃহত্তম এনজিও গুলোর একটি, যারা প্রায় ৩ দশক যাবৎ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিশদ রিসোর্স ম্যাপিং এবং মূল্যায়নের পর বর্জ্য সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে অংশীদারীত্বের মাধ্যমে আমাদের এই উদ্যোগটি পরিচালনা করা হয়েছে।
আমাদের এই উদ্যোগ ভোক্তা পর্যায়ে প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথকীকরণ ও বাছাই সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে কাজ করেছে। একইসাথে, বর্জ্য সংগ্রহকারীদের উপার্জন বাড়াতে বর্জ্য ব্যবসায়ীদের কাছে সংগৃহীত বর্জ্য বিক্রি নিশ্চিত করা, এবং বর্জ্য রিসাইকেলকারীদের কাছে বর্জ্য সহজলভ্য করতে তাদের স্মার্ট ও সহজ উপায়ে প্রণোদনা দেওয়ার মতো কাজও আমরা করেছি। স্থানীয় পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমাজের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে প্রতিটি ওয়ার্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে কার্যকর করতে আমরা সহযোগিতা করেছি।
আমাদের কার্যক্রমের সব পর্যায়ে অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার পর আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভ্যালু চেইনের বর্জ্য সংগ্রহকারী এবং ভাঙ্গারিওালা নমনীয় প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণে উদ্বুদ্ধ করেছি এবং তা নিশ্চিত করতে তাদের ভর্তুকি দিয়েছি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২২ সালে আমরা ৪০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম হয়েছি যা ইউবিএল এর বার্ষিক প্লাস্টিক ফুটপ্রিন্টের ৪০%।
আমাদের অবস্থান
ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী হিসেবে প্রচলিত ‘টেক-মেক-ডিসপোজ’ মডেল সম্পর্কে আমরা সচেতন, যেখানে পণ্য উৎপাদনের পর ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় এবং ভোক্তারা পণ্য কেনার পর তা ব্যবহার করে অবশিষ্টাংশ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়। এই একরৈখিক মডেল থেকে বের হয়ে এসে এমন একটি উপায়ে মনোনিবেশ করতে হবে যা সম্পদের পুনরায় ব্যবহার নিশ্চিত করবে ও ক্লোজ-লুপ সিস্টেমে কাজ করবে। খুব দ্রুতই আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের অবস্থান ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে আমরা সকলকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে অ্যাকশন পয়েন্ট তৈরী করে চক্রায়ন অর্থনীতিতে দ্রুত রূপান্তরিত হতে চাই।